২১ শে ফেব্রুয়ারি রচনা ২০২৪ | একুশে ফেব্রুয়ারি রচনা ১০০০ শব্দ

১৯৫২ সালে বাংলার দামাল ছেলে ও মেয়েরা বাংলা ভাষার জন্য মিছিল বের করেছিল। সেই মিছিলে অসংখ্য নারী ও পুরুষ গুলিবিদ্ধ হয়ে মৃত্যুবরণ করেন। ইতিহাসের পাতায় বাঙালি প্রথম ভাষার জন্য মৃত্যুবরণ করেছে। তাই ১৯৫২ সালের একুশে …

২১ শে ফেব্রুয়ারি রচনা

১৯৫২ সালে বাংলার দামাল ছেলে ও মেয়েরা বাংলা ভাষার জন্য মিছিল বের করেছিল। সেই মিছিলে অসংখ্য নারী ও পুরুষ গুলিবিদ্ধ হয়ে মৃত্যুবরণ করেন। ইতিহাসের পাতায় বাঙালি প্রথম ভাষার জন্য মৃত্যুবরণ করেছে। তাই ১৯৫২ সালের একুশে ফেব্রুয়ারি আমাদের সবার মাঝে স্মরণীয় হয়ে আছে এখনো। এই দিনটি বাংলাদেশ অনেক সম্মানের সাথে পালন করা হয়। শহীদদের স্মরণে ফুল অর্পণ ও শ্রদ্ধাঞ্জলি দেওয়া হয়। প্রত্যেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শহীদ মিনারে ফুল দেওয়ার কার্যক্রম পালন করা হয়। পাশাপাশি ২১শে ফেব্রুয়ারি নিয়ে কবিতা আবৃত্তি, রচনা প্রতিযোগিতা সহ আরো বিভিন্ন কর্মকান্ডের আয়োজন করা হয়। আপনাদের জন্য একুশে ফেব্রুয়ারি নিয়ে রচনা দেওয়া হয়েছে।

২১ শে ফেব্রুয়ারি রচনা

আপনারা যারা একুশে ফেব্রুয়ারি উপলক্ষে রচনা প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করবেন। আপনাদের জন্য এক্সক্লুসিভ সব ২১শে ফেব্রুয়ারি রচনা ২০২৪ দেওয়া হয়েছে আজকের এই পোস্টে। এখানে ২১শে ফেব্রুয়ারীর ভূমিকা, তাৎপর্য, ইতিহাস, শহীদদের আত্মত্যাগ, ভাষা আন্দোলনের তাৎপর্য, ১৯৫২ সালে ভাষা আন্দোলনের মিছিল করার মূল ইতিহাস এর তথ্য সহ প্রয়োজনীয় সকল প্রকার তথ্য দিয়ে রচনা তৈরি করা হয়েছে। আশা করছি এই তথ্যগুলো আপনাদের আসন্ন একুশে ফেব্রুয়ারি রচনা প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করতে আরও বেশি সাহায্য করবে।

২১ শে ফেব্রুয়ারি রচনা প্রতিযোগিতা

প্রত্যেক বছর একুশে ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে সরকারি ও ১৯৫২ সালেবেসরকারি প্রতিষ্ঠানে রচনা প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়। যেখানে রচনা লেখায় পারদর্শী বিভিন্ন নারী ও পুরুষ রচনা প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করে। আপনারা যারা এই বছর একুশে ফেব্রুয়ারি রচনা প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করবেন। তাদের জন্য আজকের এই পোস্টে ১০০ শব্দ, ১৫০ শব্দ, ২০০ শব্দ, ৫০০ শব্দ ও ১০০০ শব্দের কয়েকটি নতুন একুশে ফেব্রুয়ারি রচনা দেয়া হয়েছে। আশা করি পোস্টে উল্লেখিত রচনা আপনাকে প্রতিযোগিতায় জিততে সহযোগিতা করবে।

২১ শে ফেব্রুয়ারি রচনা ২০০ শব্দ

ভূমিকা:

বাংলা ভাষা আন্দোলনের শহীদদের স্মরণে প্রতি বছর ২১শে ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস পালিত হয়। এই দিনটি বাংলাদেশের জাতীয় শোক দিবস হিসেবেও পালিত হয়।

ভাষা আন্দোলনের ইতিহাস:

১৯৪৭ সালে পাকিস্তানের প্রতিষ্ঠার পর উর্দুকে একমাত্র রাষ্ট্রভাষা হিসেবে চাপিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করা হয়। বাংলাভাষী মানুষ এর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ শুরু করে। ১৯৫২ সালের ২১শে ফেব্রুয়ারি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে বাংলা ভাষার দাবিতে শান্তিপূর্ণ মিছিলে পুলিশের গুলিতে নিহত হয় বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থী।

ভাষা আন্দোলনের তাৎপর্য:

ভাষা আন্দোলন বাঙালি জাতির আত্মসম্মান ও ঐক্যের প্রতীক। এই আন্দোলনের মাধ্যমে বাঙালিরা তাদের ভাষার প্রতি ভালোবাসা ও অধিকারের প্রমাণ দিয়েছে।

আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস:

১৯৯৯ সালে ইউনেস্কো ২১শে ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে ঘোষণা করে।

একুশে ফেব্রুয়ারির আচরণ:

এই দিনটিতে সারাদেশে বিভিন্ন অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধাঞ্জলি জানানো হয়। সভা-সেমিনার, আলোচনা সভা, কবিতা ও গানের আসর, শোভাযাত্রা ইত্যাদি অনুষ্ঠিত হয়।

উপসংহার:

ভাষা আন্দোলন আমাদের জাতিসত্তার মেরুদণ্ড। ২১শে ফেব্রুয়ারি আমাদের গর্ব ও ঐতিহ্য। এই দিনটি আমাদের সকলের কাছে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

এই রচনাটিতে আরও কিছু বিষয় যুক্ত করা যেতে পারে:

  • ভাষা আন্দোলনের নেতৃবৃন্দের ভূমিকা
  • ভাষা আন্দোলনের গান ও কবিতা
  • ভাষা আন্দোলনের প্রভাব
  • আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের তাৎপর্য
  • ভাষার প্রতি আমাদের কর্তব্য

আশা করি এই রচনাটি আপনাদের জন্য সহায়ক হবে।

২১ শে ফেব্রুয়ারি সংক্ষিপ্ত বক্তব্য ও ভাষণ ২০২৪

২১ শে ফেব্রুয়ারি রচনা ১০০ শব্দ

ভূমিকা:

২১ শে ফেব্রুয়ারি, আমাদের জাতির ইতিহাসে একটি অম্লান দিন। এই দিনে বাংলা ভাষার অধিকার রক্ষায় নিরস্ত্র শিক্ষার্থীদের উপর পাকিস্তানি পুলিশের গুলি চলেছিল।

ঘটনার বিবরণ:

১৯৫২ সালের ২১ শে ফেব্রুয়ারি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের সামনে বাংলা ভাষাকে পাকিস্তানের অন্যতম রাষ্ট্রভাষা হিসেবে ঘোষণার দাবিতে শান্তিপূর্ণ মিছিলে অংশগ্রহণকারী শিক্ষার্থীদের উপর পুলিশ গুলি চালায়।

শহীদদের ত্যাগ:

এই ঘটনায় সালাম, বরকত, রফিক, জব্বার, শফিকসহ বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থী শহীদ হন। তাদের ত্যাগ বাংলা ভাষা আন্দোলনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে এবং বাংলা ভাষাকে পূর্ব পাকিস্তানের (বর্তমান বাংলাদেশ) অন্যতম রাষ্ট্রভাষা হিসেবে স্বীকৃতি লাভে সহায়তা করে।

২১ শে ফেব্রুয়ারির তাৎপর্য:

এই দিনটি আমাদের মনে করিয়ে দেয় ভাষার জন্য ত্যাগ স্বীকারকারী শহীদদের প্রতি কৃতজ্ঞতা।

আমাদের কর্তব্য:

  • ভাষা শহীদদের আদর্শ ধারণ করে আমাদের জীবনে বাংলা ভাষার ব্যবহার ও চর্চা বৃদ্ধি করতে হবে।
  • ভাষা শেখা ও শেখানোর মাধ্যমে বাংলা ভাষার প্রসার ঘটাতে হবে।
  • বাংলা ভাষার সাহিত্য, সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যকে সমৃদ্ধ করতে হবে।

উপসংহার:

২১ শে ফেব্রুয়ারি আমাদের জাতির স্মৃতিতে চিরকাল গেঁথে থাকবে। ভাষা শহীদদের ত্যাগের স্মরণে আমাদের ভাষার প্রতি ভালোবাসা ও শ্রদ্ধা প্রদর্শন করা উচিত।

একুশে ফেব্রুয়ারি রচনা ১৫০ শব্দ

ভূমিকা:

২১ শে ফেব্রুয়ারি, আমাদের গর্বের দিন, আমাদের অহংকারের দিন, আমাদের শহীদদের স্মরণে রচিত এক অম্লান দিন।

ভাষা আন্দোলনের ইতিহাস:

১৯৫২ সালে, যখন বাংলা ভাষাকে পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়নি, তখন বাঙালি জাতি তীব্র প্রতিবাদে রুখে দাঁড়ায়। ১৯৫২ সালের ২১ শে ফেব্রুয়ারি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় লাইব্রেরির সামনে বাংলা ভাষার দাবিতে শান্তিপূর্ণ মিছিলে অংশগ্রহণকারী শিক্ষার্থীদের উপর পাকিস্তানি পুলিশ গুলি চালায়। এই ঘটনায় সালাম, রফিক, বরকত, জব্বার, শফিউরসহ বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থী শহীদ হন।

২১ শে ফেব্রুয়ারির তাৎপর্য:

এই দিনটি আমাদের মনে করিয়ে দেয় যে, আমাদের ভাষার জন্য, আমাদের সংস্কৃতির জন্য, আমাদের অধিকারের জন্য আমাদের কত মূল্য चुকাতে হয়েছে। এই দিনটি আমাদেরকে ঐক্যবদ্ধ হতে, সাহসী হতে, এবং অন্যায়ের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে অনুপ্রাণিত করে।

আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস:

১৯৯৯ সালে, জাতিসংঘ ২১ শে ফেব্রুয়ারিকে “আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস” হিসেবে ঘোষণা করে।

আমাদের কর্তব্য:

আমাদের কর্তব্য হলো আমাদের মাতৃভাষার প্রতি শ্রদ্ধাশীল হওয়া, এটিকে সমৃদ্ধ করা, এবং ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কাছে এর গুরুত্ব তুলে ধরা।

উপসংহার:

২১ শে ফেব্রুয়ারি শুধু একটি দিন নয়, এটি একটি আত্মা, একটি অনুপ্রেরণা, একটি সংগ্রামের প্রতীক।

এই রচনায় আমি ২১ শে ফেব্রুয়ারির তাৎপর্য, ইতিহাস এবং আমাদের কর্তব্য সম্পর্কে আলোচনা করেছি।

একুশে ফেব্রুয়ারি রচনা ৫০০ শব্দ

ভূমিকা:

ফেব্রুয়ারির শীতল বাতাসে মিশে থাকে র*ক্তের গন্ধ, শোকের আবহ, এবং অমলিন স্মৃতি। একুশে ফেব্রুয়ারি, আমাদের গর্ব, আমাদের অহংকার, ভাষা শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধাঞ্জলির দিন।

ভাষা আন্দোলনের পটভূমি:

১৯৪৭ সালে ভারত বিভাগের পর পাকিস্তানের শাসকগোষ্ঠী উর্দুকে একমাত্র রাষ্ট্রভাষা হিসেবে চাপিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করে। বাংলা ভাষাভাষী মানুষ তীব্র প্রতিবাদ জানায়। ১৯৫২ সালের ৩০ জানুয়ারি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় লাইব্রেরির সামনে ছাত্র-জনতা সমাবেশ করে।

ভাষা আন্দোলনের ঘটনাবলী:

  • ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা শান্তিপূর্ণ মিছিলে বেরিয়ে পড়ে।
  • পুলিশ নিরস্ত্র ছাত্রদের উপর গুলি চালায়।
  • সালাম, বরকত, রফিক, জব্বার, শফিউরসহ বেশ কয়েকজন শহীদ হন।
  • এই ঘটনায় সারা দেশে তীব্র প্রতিবাদের ঝড় ওঠে।
  • দীর্ঘ সংগ্রামের পর ১৯৫৬ সালে বাংলাকে পাকিস্তানের দ্বিতীয় রাষ্ট্রভাষা হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়।

একুশের তাৎপর্য:

  • একুশে ফেব্রুয়ারি আমাদের ভাষাভিত্তিক জাতীয়তাবাদের প্রতীক।
  • এটি আমাদের স্বাধীনতা সংগ্রামের মূল ভিত্তি।
  • ভাষা শহীদদের ত্যাগ আমাদের জাতিসত্ত্বার প্রতি দৃঢ় বিশ্বাস দান করে।
  • এটি আমাদের মনে জাগিয়ে তোলে ঐক্য ও সংহতির বার্তা।

একুশের চেতনা বাস্তবায়ন:

  • আমাদের কর্তব্য হলো ভাষা শহীদদের আদর্শ বাস্তবায়ন করা।
  • আমাদের মাতৃভাষা বাংলাকে সমৃদ্ধ করতে হবে।
  • সকল স্তরে বাংলা ভাষার ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে।
  • জ্ঞান-বিজ্ঞানের সকল শাখায় বাংলায় গবেষণা ও শিক্ষাদানের প্রসার ঘটাতে হবে।
  • বিশ্ব দরবারে বাংলা ভাষার মর্যাদা উন্নত করতে হবে।

উপসংহার:

একুশে ফেব্রুয়ারি শুধু একটি দিন নয়, এটি একটি চেতনা। ভাষা শহীদদের ত্যাগের স্মৃতি আমাদের অন্তরে চিরকাল ধরে জীবিত থাকবে। তাদের আদর্শ বাস্তবায়নের মাধ্যমেই আমরা গড়ে তুলতে পারবো সোনার বাংলা।

২১ শে ফেব্রুয়ারি অনুচ্ছেদ রচনা

ভূমিকা:

বাংলার ইতিহাসে ২১ শে ফেব্রুয়ারি একটি অমলিন দিন। ১৯৫২ সালের এই দিনে বাংলা ভাষাকে রাষ্ট্রভাষা হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার দাবিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা পাকিস্তানি পুলিশের লাঠি-গুলির বর্ষণে নিহত হয়েছিলেন। সেই থেকে এই দিনটি ‘ভাষা শহীদ দিবস’ এবং ‘আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস’ হিসেবে পালিত হয়ে আসছে।

ভাষা আন্দোলনের পটভূমি:

১৯৪৭ সালে ভারত বিভাগের পর পূর্ব বাংলা (বর্তমান বাংলাদেশ) পাকিস্তানের একটি প্রদেশে পরিণত হয়। তখন পাকিস্তানের শাসকগোষ্ঠী উর্দুকে একমাত্র রাষ্ট্রভাষা হিসেবে চাপিয়ে দিতে চায়।

ভাষা আন্দোলনের সূচনা:

১৯৪৮ সালের ২৯ শে মার্চ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে ‘বাংলা ভাষা প্রচলন কমিটি’ গঠিত হয়।

ভাষা আন্দোলনের ঘটনাবলী:

  • ১৯৫২ সালের ৩০শে জানুয়ারি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা ‘ভাষা দিবস’ পালন করে।
  • ১৯৫২ সালের ২১শে ফেব্রুয়ারি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা শান্তিপূর্ণ মিছিলে বের হয়।
  • পুলিশ ছাত্রদের মিছিলের উপর লাঠিচার্জ ও গুলি চালায়।
  • এই ঘটনায় সালাম, বরকত, রফিক, জব্বার, শফিকসহ বেশ কয়েকজন ছাত্র শহীদ হন।
  • ভাষা শহীদদের জানাজায় ঢাকাসহ সারা দেশে লক্ষ লক্ষ মানুষ সমাগম হয়।
  • ভাষা আন্দোলনের প্রভাবে ১৯৫৬ সালে বাংলাকে পাকিস্তানের অন্যতম রাষ্ট্রভাষা হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়।

ভাষা আন্দোলনের তাৎপর্য:

  • ভাষা আন্দোলন বাঙালি জাতির আত্মসম্মান ও ঐক্যের প্রতীক।
  • এই আন্দোলন বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের পথিকৃৎ।
  • ভাষা আন্দোলনের মাধ্যমে বাঙালিরা তাদের ভাষার প্রতি গভীর ভালোবাসা ও আন্তরিকতা প্রমাণ করে।
  • ভাষা আন্দোলন বিশ্বের অন্যান্য ভাষাভাষীদের জন্য অনুপ্রেরণা।

আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস:

১৯৯৯ সালে ইউনেস্কো ২১শে ফেব্রুয়ারিকে ‘আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস’ হিসেবে ঘোষণা করে।

আমাদের কর্তব্য:

  • ভাষা শহীদদের ত্যাগ ও আত্মত্যাগের স্মরণে আমাদের তাদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানাতে হবে।
  • বাংলা ভাষা ও সংস্কৃতির প্রতি আমাদের ভালোবাসা ও শহীদের স্মরণ আমাদের সারা জীবন মনে রাখতে হবে।

একুশে ফেব্রুয়ারি রচনা ১০০০ শব্দ

ভূমিকাঃ

‘মা তোর মুখের বাণী আমার কানে লাগে সুধার মতন।’

এ কেবল নোবেল বিজয়ী বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ব্যক্তিগত অনুভূতি নয়, এ হচ্ছে সর্বকালের মানুষের চিরন্তন অনুভূতি। মাতৃদুগ্ধ যেমন শিশুর সর্বোত্তম পুষ্টি, তেমনি মাতৃভাষার মাধ্যমেই ঘটতে পারে একটি জাতির শ্রেষ্ঠ বিকাশ। মানুষের পরিচয়ের সেরা নির্ণায়ক মাতৃভাষা। মাতৃভাষা জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সকল মানুষের এক মৌলিক সম্পদ। মা ও মাটির মতোই প্রতিটি মানুষ জন্মসূত্রে এই সম্পদের উত্তরাধিকারী হয়। ১৯৫২ সালের ২১ শে ফেব্রুয়ারিতে পূর্ব বাংলার জনগণ র*ক্তের বিনিময়ে অর্জন করেছিল সেই মাতৃভাষার মর্যাদা।বিশ্ব এই দিনটিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে। মাতৃভাষার গুরুত্ব ও মর্যাদার স্বীকৃতি এই আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস।

মাতৃভাষার মাধুর্যে তাই মনে বেজে উঠে-

তোমার কথায় কথা বলি

পাখির গানের মত…

তোমার দেখায় বিশ্ব দেখি

বর্ণ কত শত …

মাতৃভাষা কীঃ

মানুষের জীবনে মাতৃভাষার গুরুত্ব অপরিমেয়।

সাধারণ অর্থে মাতৃভাষা বলতে আক্ষরিক অর্থে মায়ের ভাষাই বোঝায়। একটি বৃহত্তর অঞ্চলে একই সাথে বিভিন্ন ভাষা প্রচলিত থাকে। এর মধ্যে বেশিরভাগ মানুষ যে ভাষায় মনের ভাব প্রকাশ করে, সেটাই হচ্ছে সে অঞ্চলের মানুষের মাতৃভাষা। মাতৃভাষা মায়ের মুখের আঞ্চলিক বুলি মাত্র নয়, মাতৃভাষা হচ্ছে একটি দেশের বৃহত্তর জনগোষ্ঠির ভাষা। যা তারা স্বতস্ফূর্তভাবে ব্যবহার করে। মাতৃভাষা বহতা নদীর মতো শত ধারায় প্রবহমান। বাঙালির মাতৃভাষা হচ্ছে বাংলা। বাংলা আমাদের প্রাণের স্পন্দন, বাংলা আমাদের অহংকার।

মাতৃভাষার গুরুত্বঃ

প্রখ্যাত ভাষাবিজ্ঞানী ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ বলেছেন- ‘মা, মাতৃভূমি এবং মাতৃভাষা এই তিনটি জিনিস সবার কাছে পরম শ্রদ্ধার বিষয়।’ মাতৃভাষার মাধ্যমেই মানুষ প্রকাশ করে তার আশা-আকাক্সক্ষা, আবেগ-অনুভূতি। মাতৃভাষাই মানবজীবনের সকল ক্ষেত্রে তৃপ্তি ও পরিপূর্ণতা দান করে। জাতীয় জীবনে মাতৃভাষার গুরুত্ব অপরিসীম। জাতীয় জীবনের সার্বিক ক্ষেত্রে উন্নতি লাভ করতে হলে মাতৃভাষার কোনো বিকল্প হতে পারে না। শিক্ষা-দীক্ষা, জ্ঞান-বিজ্ঞান চর্চা, শিল্প-সংস্কৃতি ও সাহিত্যের বিকাশে মাতৃভাষা হচ্ছে প্রধান মাধ্যম। কবি রামনিধি গুপ্তের ভাষায়-

নানান দেশের নানান ভাষা

বিনা স্বদেশি ভাষা;

পুরে কি আশা।

মাতৃভাষার মর্যাদার লড়াইঃ

বাঙালি পরিচয়ে বিশ্বের দরবারে মাথা উঁচু করে দাঁড়ানোর মতো গৌরবজ্জ্বল মহিমা যুগে যুগে বহুবার বাঙালি অর্জন করেছে। বিদেশি শাসনের অপচ্ছায়ায় বারবার ম্লান হয়ে গেছে আমাদের মাতৃভাষা বাংলা। খ্রিস্টীয় নবম শতকে এর উপর জেঁকে বসেছে সংস্কৃত, ত্রয়োদশ শতক থেকে ফারসি ও আরবি, আঠারো শতক থেকে ইংরেজি ও ফরাসি, অতঃপর এই অশুভ ধারাবাহিকতায় ১৯৪৭ সালের দেশ বিভাগের পরে বাংলার উপরে নেমে আসে উর্দুর অপচ্ছায়া।

পাকিস্তানের তৎকালীন গভর্নর জেনারেল মুহম্মদ আলী জিন্নাহ যখন ঢাকার বুকে দাঁড়িয়ে দম্ভ করে ঘোষণা দেন ‘Urdu and only Urdu shall be the state language of Pakistan’ তখন প্রতিবাদে, ক্ষোভে ফেটে পড়ে বাংলাভাষী লাখো জনতা। ১৯৫২ সালের একুশে ফেব্রুয়ারি স্বৈরাচারী পাকিস্তানি মিলিটারির রাইফেলের গুলিকে উপেক্ষা করে বীর বাঙালি ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করে। ঢাকার রাজপথ সেদিন লাল হয়ে যায় রফিক, শফিক, সালাম, বরকত, জব্বারসহ নাম না জানা অনেক তরুণের তাজা র*ক্তে। ভাষার জন্য জীবন দেবার এরকম নজির পৃথিবীর ইতিহাসে আর নেই। এজন্যই বাঙালি একুশে ফেব্রুয়ারিকে শহিদ দিবস হিসেবে পালন করে।

একুশে ফেব্রুয়ারি রচনা

২১ শে ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসঃ

বাঙালি জাতির জীবনে ১৯৯৯ সালের ১৭ নভেম্বর আরো একটি ঐতিহাসিক গৌরবম-িত ও আনন্দঘন দিন। এই দিনে বাঙালি অর্জন করেছে তার প্রাণের সম্পদ একুশে ফেব্রুয়ারির আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি। জাতিসংঘের শিক্ষা বিজ্ঞান ও সংস্কৃতি বিষয়ক সংস্থা UNESCO প্যারিসে অনুষ্ঠিত ৩০তম দ্বিবার্ষিক সম্মেলনে একুশে ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে স্বীকৃতি প্রদান করে। জাতিসংঘের ১৮৮টি দেশের এই স্বীকৃতির মধ্য দিয়ে একদিকে যেমন বাংলা ভাষার জন্য বাঙালির গৌরবময় আত্মদান বিশ্বমর্যাদা পায় তেমনি পৃথিবীর ছোট-বড়ো প্রত্যেকটি জাতির মাতৃভাষার প্রতিও শ্রদ্ধা ও সম্মান প্রদর্শিত হয়।

২১ শে ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের পটভূমিঃ

একুশে ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের মর্যাদা দেবার জন্য যারা উদ্যোগ গ্রহণ করেন তারা হলেন; কানাডায় বসবাসরত একটি বহুজাতিক ভাষাপ্রেমী গ্রুপ ‘মাদার ল্যাংগুয়েজ অব দ্য ওয়ার্ল্ড’-এর ভিন্নভিন্ন ভাষাভাষী দশ জন সদস্য। আশ্চর্য ব্যাপার হচ্ছে, এই দশ জন সদস্যের মধ্যে বাংলা ভাষাভাষী যে দুইজন ব্যক্তি ছিলেন তাদের নাম দুই অমর ভাষা শহিদেরই নাম রফিক ও সালাম। এই গ্রুপটি ১৯৯৮ সালের ২৯ মার্চ জাতিসংঘের মহাসচিব কফি আনানের কাছে ‘আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস’ পালনের যৌক্তিকতা ব্যাখ্যা করে একুশে ফেব্রুয়ারিকে এই দিবস হিসেবে স্বীকৃতি প্রাদানের প্রস্তাব করে। জাতিসংঘ থেকে জানানো হয়, বিশেষ কোনো গোষ্ঠী নয়, বরং বাংলা ভাষাভাষী রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে এই প্রস্তাব উত্থাপন করা সমীচীন।

অতঃপর ভাষাপ্রেমিক জনাব রফিকুল ইসলাম এবং জনাব আব্দুস সালাম বাংলাদেশের শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সাথে যোগাযোগ করেন। শিক্ষা মন্ত্রণালয় ২৮ অক্টোবর, ১৯৯৯ তারিখে একুশে ফেব্রুয়ারিকে ‘আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস’-এর ঘোষণাপত্রটি ইউনেস্কোর সদর দফতরে পৌঁছে দেয়। বাংলাদেশের এই প্রস্তাবের পক্ষে ২৮টি দেশ লিখিত সমর্থন জানায়। ইউনেস্কোর টেকনিক্যাল কমিটি কমিশন-২ এ প্রস্তাবটি উত্থাপিত হয় ১২ নভেম্বর ১৯৯৯ তারিখে। সম্মেলনে বিভিন্ন দেশের প্রায় ৩০০ প্রতিনিধির সমর্থন লাভ করে প্রস্তাবটি গ্রহণযোগ্যতার স্বীকৃতি পায়। এরপর ১৭ নভেম্বর ইউনেস্কোর সাধারণ সম্মেলনে ২১ ফেব্রুয়ারিকে ‘আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস’ হিসেবে ঘোষণা করা হয়।

বাংলা ভাষাকে মাতৃভাষা হিসেবে সিয়েরালিওনের স্বীকৃতিঃ

সিয়েরালিওন আফ্রিকার যু*দ্ধবিধ্বস্ত একটি দেশের নাম। গৃহযু*দ্ধে আক্রান্ত এ দেশটিতে শান্তি প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নেয় জাতিসংঘ। জাতিসংঘের বিশেষ প্রতিনিধি হিসেবে শান্তি রক্ষায় অংশ নেয় বাংলাদেশ সেনাবাহিনী। বিনা র*ক্তপাতে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী সাফল্যের সাথে সেখানে শান্তি স্থাপন করতে সক্ষম হয়। সেনাবাহিনীর মুখে মুখে বাংলা ভাষা শুনে তারাও মুগ্ধ হয়। তারা বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর কাজের স্বীকৃতি স্বরূপ একুশে ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে স্বীকৃতির পাশাপাশি বাংলা ভাষাকে তাদের অন্যতম রাষ্ট্রভাষা হিসেবে স্বীকৃতি দেয়। অন্য কোনো একটি দেশের রাষ্ট্রভাষা হিসেবে স্বীকৃতি পাওয়া বাংলা ভাষা তথা বাঙালির জন্য গর্বের বিষয়।

স্মৃতি সংগ্রহ ও সংরক্ষণঃ

ভাষা একটি দেশের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের ধারক ও বাহক। আর এই ঐতিহ্যকে আজও বাঙালি অন্তরে ধারণ করে রেখেছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ডাকসু সংগ্রহশালায় আজও সংরক্ষিত আছে ভাষা আন্দোলনের স্মৃতি বিজড়িত সেই আমগাছের অবশিষ্ট অংশ, যেখানে গুলি চালানো হয়েছিল ভাষা শহিদদের উপরে। বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘরে অতি যত্নের সাথে সংরক্ষণ করা হয়েছে ভাষা আন্দোলনের অনেক মূল্যবান তথ্য ও চিত্র।

মাতৃভাষা ও সাহিত্য :

একুশকে কেন্দ্র করে রচিত হয়েছে অনেক গল্প কবিতা উপন্যাস। এক কথায় সাহিত্যের উৎকর্ষ সাধনের পিছনে হাতিয়ার ছিল ভাষা আন্দোলন। তৎকালীন সময়ে সাহিত্য কিছুটা হলেও ভাষা আন্দোলনে অংশগ্রহণকারীদের অনুপ্রেরণা জুগিয়েছিল। একুশ নিয়ে প্রথম রচিত কবিতা ‘‌কাঁদতে আসিনি, ফাঁসির দাবি নিয়ে এসেছি’‌ রচিয়তা ছিলেন মাহবুবুল আলম চৌধুরি। কবিতাটি রচিত হয় ১৯৫২ সালের একুশে ফেব্রুয়ারি সন্ধে ৭টায়। ১৭ পৃষ্ঠার দীর্ঘ এ কবিতাটি ছাপা হয় কোহিনুর প্রেস, আন্দরকিলা থেকে। কবিতাটি চট্টগ্রামের লালদিঘি ময়দানে ২২ ফেব্রুয়ারি, ১৯৫২ সালে পাঠ করেন চৌধুরি হারুন উর রশিদ। সাহিত্য, বিশেষ করে কবিতা তৎকালীন সময়ে উৎসাহ দিয়েছিলো ভাষা আন্দোলনের।

স্বরণে ও বরণে ২১ শে ফেব্রুয়ারিঃ 

ঐতিহ্য ও আচার অনুষ্ঠান পালনে বাঙালির তুলনা মেলা ভার। আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস ২১শে ফেব্রুয়ারিকে বাঙালি অনেক আগ্রহ অনুরাগ আর ভালোবাসার সাথে পালন করে।

“আমার ভাইয়ের র*ক্তে রাঙ্গানো ২১ শে ফেব্রুয়ারি আমি কি ভুলিতে পারি”

আপামর বাঙালি জনতা এই আত্মার গানটি গেয়ে শহিদ মিনার প্রাঙ্গনে সমাবেত হয়ে, পুষ্পস্তবক অর্পণ করে শহিদদের প্রতি অপার শ্রদ্ধা নিবেদন করে দিনটি শুরু করে। প্রভাতফেরীর সেই ঐতিহ্য আজও ধরে রেখেছে বাঙালি। বাঙালির রঙে রঙে, পোশাক-আশাকে প্রকাশ প্রায় একুশের আমেজ। এছাড়া বিভিন্ন স্থানে সরকারি ও বেসরকারিভাবে আয়োজন করা হয় জারি, সারি, ভাওয়াইয়া গান, বাংলা কবিতা, নৃত্য ও আলোচনার অনুষ্ঠান।

২১ শে ফেব্রুয়ারি এর দীক্ষাঃ

শুধু মাত্র উৎসবের মধ্যে একুশকে সীমাবদ্ধ রাখা মোটেই আমাদের কাম্য হতে পারে না। একুশ আমাদের যে শিক্ষা দিয়েছে তা আমাদের দীক্ষা হিসেবে নিতে হবে। একুশ হবে আমাদের কর্মচাঞ্চল্যের উদ্দীপনা। ২১-এর সত্যিকার ইতিহাস আমাদের নতুন প্রজন্মের কাছে তুলে ধরতে হবে। বাংলাভাষার বিকাশ ঘটানোর জন্য আমাদের সর্বদা সচেষ্ট থাকতে হবে। যে লক্ষ্যে আমাদের দেশের মেধাবী ছাত্ররা জীবন দিয়ে গেছে সেই লক্ষ্য অর্জনের জন্য আমাদেরই পদক্ষেপ নিতে হবে।

মাতৃভাষার বিকৃতি ও অবজ্ঞা:

২০১০ সালের ২ ফেব্রুয়ারি পৃথিবীর প্রাচীন ভাষাগুলোর একটি বো ভাষায় কথা–বলা বোয়া সিনিয়র নামের একমাত্র মানুষটির মৃত্যু হয়েছে। আন্দামানের পোর্ট ব্লেয়ারে বোয়ার মৃত্যুর মধ্য দিয়ে হারিয়ে গেল বো ভাষা। আগামী ৪০-৫০ বছরের মধ্যে এমনি হারিয়ে যাবে শত শত ভাষা। বাংলা ভাষাকে বিভিন্ন দেশে যেভাবে ধ্বংস করা হচ্ছে, যেভাবে টিভি, রেডিওতে বাংলা–ইংরেজি মিলিয়ে জগাখিচুড়ি ভাষায় অনুষ্ঠান প্রচার করা হচ্ছে, তাতে বাংলা ভাষার উপর বিরূপ প্রভাব পড়ছে। আজকাল শিক্ষা-প্রতিষ্ঠান যেন ছাত্রদের ইংলিশ শিখাতেই নির্মিত হয়েছে। অভিবাবকরা বেশি ঝুঁকে যাচ্ছে বাচ্চাদের ইংরেজি শিখানোর প্রতি। সেই কারণেই দোকানের বাংলা নাম ইংরেজিতে লেখা হয়, গ্রাহকের ইংরেজি জ্ঞান থাকুক আর না থাকুক ব্যাঙ্ক–বিমার কাগজপত্র ইংরেজিতেই লেখা হয়। বিপণি বিতানের পরিবর্তে আমরা দেখি শপিং মল, আদর্শ শহরের পরিবর্তে পাই মডেল টাউন। ইংরেজি অথবা হিন্দি ভাষা সাম্রাজ্যবাদের আগ্রাসনে বাঙালির মাতৃভাষা কতটা নিরাপদ?

উপসংহারঃ

একুশ আমাদের জাতীয় মুক্তির চেতনার উৎস হিসাবে কাজ করেছে। আমাদের মহান একুশ আজ স্বদেশের আঙিনা পেরিয়ে বৈশ্বিক চেতনায় পরিণত হয়েছে। এখন আমাদের করণীয় হলাে, জ্ঞানের সব ক্ষেত্রে বাংলা ভাষার প্রয়ােগ বৃদ্ধিতে সাধ্যমতাে প্রয়াস চালানাে। মাতৃভাষার শক্তি বাড়িয়ে জ্ঞানে-বিজ্ঞানে, শিক্ষায়-সংস্কৃতিতে নতুন শতকের জন্যে নিজেদের প্রস্তুত করা। বিশ্বের জ্ঞানভান্ডারকে মাতৃভাষা চর্চার মাধ্যমে দেশের সাধারণ মানুষের কাছে পৌঁছে দেওয়া। মাতৃভাষার সেবা করার পাশাপাশি বিশ্বের প্রতিটি মানুষের মাতৃভাষার প্রতি যথাযথ সম্মান দেখানাে। ২১ আমাদের গর্ব ২১ আমাদের অহংকার। আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে এই চেতনাকে সবার মধ্যে সঞ্জীবিত করার মধ্যেই নিহিত আছে এই মহান দিবসের সার্থকতা।

আরও দেখুনঃ

আমার ভাইয়ের র*ক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি কবিতা

Leave a Comment