বাংলাদেশ পাকিস্তানের কাছ থেকে লিখিতভাবে স্বাধীন দেশ হিসেবে যাত্রা শুরু করে ২৬ শে মার্চ। তাই এই দিনটি বাংলাদেশের প্রতিটি মানুষ স্বাধীনতা দিবস হিসেবে পালন করে। স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে কবিতা আবৃতি ও প্রতিযোগিতা করা হয়। বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে ২৬ মার্চ উপলক্ষে কবিতা লেখার প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়। তাই আপনারা যারা স্বাধীনতা দিবসের কবিতা প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করবেন। তাদের জন্য দারুন সব কথা দিয়ে তৈরি ২৬ শে মার্চ এর কবিতা এখানে দেওয়া হয়েছে।
স্বাধীনতা দিবসের কবিতা
স্বাধীনতা তুমি
রবিঠাকুরের অজর কবিতা, অবিনাশী গান।
স্বাধীনতা তুমি
কাজী নজরুল ঝাঁকড়া চুলের বাবরি দোলানো
মহান পুরুষ, সৃষ্টিসুখের উল্লাসে কাঁপা-
স্বাধীনতা তুমি
শহীদ মিনারে অমর একুশে ফেব্রুয়ারির উজ্জ্বল সভা
স্বাধীনতা তুমি
পতাকা-শোভিত শ্লোগান-মুখর ঝাঁঝালো মিছিল।
স্বাধীনতা তুমি
ফসলের মাঠে কৃষকের হাসি।
স্বাধীনতা তুমি
রোদেলা দুপুরে মধ্যপুকুরে গ্রাম্য মেয়ের অবাধ সাঁতার।
স্বাধীনতা তুমি
মজুর যুবার রোদে ঝলসিত দক্ষ বাহুর গ্রন্থিল পেশী।
স্বাধীনতা তুমি
অন্ধকারের খাঁ খাঁ সীমান্তে মুক্তিসেনার চোখের ঝিলিক।
স্বাধীনতা তুমি
বটের ছায়ায় তরুণ মেধাবী শিক্ষার্থীর
শানিত কথার ঝলসানি-লাগা সতেজ ভাষণ।
স্বাধীনতা তুমি
চা-খানায় আর মাঠে-ময়দানে ঝোড়ো সংলাপ।
স্বাধীনতা তুমি
কালবোশেখীর দিগন্তজোড়া মত্ত ঝাপটা।
স্বাধীনতা তুমি
শ্রাবণে অকূল মেঘনার বুক
স্বাধীনতা তুমি পিতার কোমল জায়নামাজের উদার জমিন।
স্বাধীনতা তুমি
উঠানে ছড়ানো মায়ের শুভ্র শাড়ির কাঁপন।
স্বাধীনতা তুমি
বোনের হাতের নম্র পাতায় মেহেদীর রঙ।
স্বাধীনতা তুমি
বন্ধুর হাতে তারার মতন জ্বলজ্বলে এক রাঙা পোস্টার।
স্বাধীনতা তুমি
গৃহিণীর ঘন খোলা কালো চুল,
হাওয়ায় হাওয়ায় বুনো উদ্দাম।
স্বাধীনতা তুমি
খোকার গায়ের রঙিন কোর্তা,
খুকীর অমন তুলতুলে গালে
রৌদ্রের খেলা।
স্বাধীনতা তুমি
বাগানের ঘর, কোকিলের গান,
বয়েসী বটের ঝিলিমিলি পাতা,
যেমন ইচ্ছে লেখার আমার কবিতার খাতা।
২৬ শে মার্চ এর কবিতা
কথা ছিলো একটি পতাকা পেলে
আমি আর লিখবো না
বেদনার অঙ্কুরিত কষ্টের কবিতা
কথা ছিলো একটি পতাকা পেলে
ভজন গায়িকা সেই সন্ন্যাসিনী সবিতা মিস্ট্রেস
ব্যর্থ চল্লিশে বসে বলবেন,‘পেয়েছি,পেয়েছি’।
কথা ছিলো একটি পতাকা পেলে
পাতা কুড়োনির মেয়ে শীতের সকালে
ওম নেবে জাতীয় সংগীত শুনে পাতার মর্মরে।
কথা ছিলো একটি পতাকা পেলে
ভূমিহীন মনুমিয়া গাইবে তৃপ্তির গান জ্যৈষ্ঠে-বোশেখে,
বাঁচবে যুদ্ধের শিশু সসন্মানে সাদা দুতে-ভাতে।
২৬ শে মার্চ এর ছোট কবিতা
অগ্নিঝরা স্বাধীনতার মাস
নাম ছিলো তার মার্চ,
এই মাসেতেই পাকিস্তানিরা
করেছিলো অপারেশন সার্চ।
রাঁওফরমান আর টিক্কা খাঁন
ছিলো তাদের নেতা,
ঢাকা সহ পূর্ব পাকিস্তানে
করলো নর হত্যা।
বাঙালি নিধনে সেদিন তারা
হয়েছিলো উম্মাদ,
কেউ তো শোনেনি সেদিন এই
বাঙালির আর্তনাদ।
মুজিব নামটি সবাই জানে
ছিলো বাংলার ছেলে,
২৬ শে মার্চের প্রথম প্রহরে
ভরলো তাকে জেলে।
তার আগেই হয়েছিলো পূরণ
সুপ্ত বাসনা,
বঙ্গবন্ধু করে গিয়েছিলো
স্বাধীনতার ঘোষণা।
স্বাধীনতার সেরা কবিতা
স্বাধীনতা তুমি আমার স্বাধীনতা!
তুমি জাগ্রত জনতার গৌরবগাথাঁ।
লাখো জনতার হৃদয়বিদারক
স্মৃতিকথা তুমি স্বাধীনতা ।
যেদিন বাংলা বলাতে ছিল যত বাধা
সেদিন স্বাধীনতা ।
সেই কালো রাতের অস্থির অবস্থা
সেই তুমি স্বাধীনতা।
২৫ শে মার্চের করুন স্মৃতিকথা
সেই তুমি স্বাধীনতা।
২৬ শে মার্চের ডাক দেয়া জনতা
সেই তুমি স্বাধীনতা।
শত মা বোনের মানহানির যত কথা
সেই তুমি স্বাধীনতা ।
দামাল ছেলের প্রাণের অস্থিরতা
সেই তুমি স্বাধীনতা
বাঙালির থাবায় শত্রুদের পরাধীনতা
সেই তুমি স্বাধীনতা
এক ঝাক তরুনের জেগে ওঠার কথা
সেই তুমি স্বাধীনতা।
১৬ ডিসেম্বরের ইতিকথা
সেই তুমি স্বাধীনতা।
স্বাধীনতা তুমি আমার স্বাধীনতা
তুমি জাগ্রত জনতার গৌরবগাথাঁ।
স্বাধীনতা কবিতা
তোমাকে পাওয়ার জন্য হে স্বাধীনতা
-শামসুর রহমান
তোমাকে পাওয়ার জন্যে, হে স্বাধীনতা,
তোমাকে পাওয়ার জন্যে,
আর কতবার ভাসতে হবে র*ক্তগঙ্গায়?
আর কত বার দেখতে হবে খান্ডবদাহন?
তুমি আসবে বলে, হে স্বাধীনতা,
সকিনা বিবির কপাল ভাঙলো,
সিঁথির সিঁদুর মুছে গেল হরিদাসির।
তুমি আসবে বলে হে স্বাধীনতা
শহরের বুকে জলপাই রঙের ট্যাঙ্ক এলো
দানবের মত চিৎকার করতে করতে
তুমি আসবে বলে হে স্বাধীনতা
ছাত্রাবাস, বস্তি উজাড় হলো রিঅয়েলরেস রাইফেল
আর মেশিন গান খই ফোটালো যত্রতত্র।
তুমি আসবে বলে ছায় হল গ্ৰামের পর গ্ৰাম।
তুমি আসবে বলে বিধ্বস্ত পাড়ায় প্রভুর বাস্তভিটার
ভগ্নস্তূপে দাঁড়িয়ে একটানা আর্তনাদ করল একটা কুকুর
তুমি আসবে বলে হে স্বাধীনতা
অবুঝ শিশু হামাগুড়ি দিল মা-বাবার লাশের উপর
তোমাকে পাওয়ার জন্যে, হে স্বাধীনতা, তোমাকে পাওয়ার জন্যে
আর কতবার ভাসতে হবে র*ক্তগঙ্গায়?
আর কত বার দেখতে হবে খান্ডবদাহন?
স্বাধীনতা, তোমার জন্যে এক থুরথুরে বুড়ো
উদাস দাওয়ায় বসে আছেন-তার চোখের নিচে অপরাহ্নে
দুর্বল আলোর ঝিলিক, বাতাসে নড়ছে চুল।
স্বাধীনতা, তোমার জন্যে
মোল্লাবাড়ির এক বিধবা দাঁড়িয়ে আছে
নড়বড়ে খুঁটি ধরে দগ্ব ঘরের।
স্বাধীনতা, তোমার জন্যে
হাড্ডিসার এক অনাথ কিশোরী শূন্য থালা হাতে
বসে আছে পথের ধারে।
তোমার জন্যে
সগীর আলী, শাহবাজপুরের সেই জোয়ান কৃষক
কেষ্ট দাস, জেলে পাড়ার সবচেয়ে সাহসী লোকটা,
মতলব মিয়া, মেঘনা নদীর দক্ষ মাঝি,
গাজী গাজী বলে যে নৌকো চালায় উদ্দাম ঝড়ে,
রুস্তম শেখ, ঢাকার রিকশাওয়ালা, যার ফুসফুস
এখন পোকার দখলে
আর রাইফেল কাঁধে বনে জঙ্গলে ঘুড়ে বেড়ানো
সেই তেজী তরুণ যার পদভারে
একটি নতুন পৃথিবীর জম্ম হতে চলেছে
সবাই অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছে, তোমার জন্যে হে স্বাধীনতা।
পৃথিবীর এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্ত জ্বলন্ত
ঘোষণার ধ্বনি – প্রতিধ্বনি তুলে
নতুন নিশান উড়িয়ে, দামামা বাজিয়ে দিগ্বিদিক
এই বাংলায়
তোমাকে আসতে হবে, হে স্বাধীনতা।
26 March Kobita
স্বাধীনতার ইতিহাস
-মো: সামিউল আলী
স্বাধীনতা দিবস ২৬শে মার্চ
লাখো শহিদের বিনিময়ে পাওয়া
এক টুকরা সোনার দেশ
স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্র বাংলাদেশটা।
লাল সবুজের পতাকার মোদের
আছে তাও জানি
এই স্বাধীন পতাকা তো এমনি আসেনি
এসেছে লাখো শহীদ আর মায়ের ইজ্জতের বিনিময়।
আমরা তাই প্রতি বছর
শ্রদ্ধা জানাই লাখো শহিদের
স্মৃতিসৌধে ফুল দিয়ে
সারা দেশের জনগণ একসাথে
স্বাধীনতার সুখ কবিতা
-রজনীকান্ত সেন
বাবুই পাখিরে ডাকি, বলিছে চড়াই,
“কুড়ে ঘর থেকে কর শিল্পের বড়াই,
আমি থাকি মহাসুখে অট্টালিকা পরে
তুমি কত কষ্ট পাও রোদ, বৃষ্টি, ঝড়ে।”
বাবুই, হাসিয়া কহে,”সন্দেহ কি তাই?
কষ্ট পাই, তবূ থাকি নিজের বাসায়।
পাকা হোক, তবু ভাই, পরের ও বাসা,
নিজ হাতে গড়া মোর কাঁচা ঘর, খাসা।”
স্বাধীনতার বিজয়
স্বাধীনতা তুমি এলে ২৬শে মার্চে
শত দুঃখ-কষ্ট পেরিয়ে
যুদ্ধে শেষে রঙিন পাতাকা হাতে
বীর বাঙ্গালীর সন্তান বেশে
স্বাধীনতা তুমি এলে
লাখো মায়ের কোল খালি করে।
কত শোষণ, বঞ্চনার বিরুদ্ধে
যুদ্ধ করতে করতে
স্বাধীনতা তুমি এলে
একাত্তরের ১৬ই ডিসেম্বর
আন্দোলন, সংগ্ৰাম শেষে
বিজয় মুকুট পড়ে।
আমরা চেষ্টা করেছি ২৬ শে মার্চ এর কবিতা এখানে দেওয়ার। আপনারা যারা স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে কবিতা প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করবেন। আশা করছি উল্লেখিত কবিতাগুলো আপনাদের স্বাধীনতা দিবস কবিতা প্রতিযোগিতায় বিজয়ী হতে সাহায্য করবে।
আরও দেখুনঃ