মানসিক রোগ বা মানসিক রোগীকে বলতে আমরা পাগল রোগীদের বুঝি। কিন্তু আসলেই কি মানুষিক রোগ এটাই। মানসিক রোগ অনেক উপকার হতে পারে। যেমন অ্যাংজাইটি, ডিপ্রেশন, মুড সুইং আরো অনেক ধরনের মানসিক রোগ হতে পারে। আসলে যে কারণে মানসিক পেইন বা অস্বস্তির হয় সেই কারণটা কি মানসিক রোগ হিসেবে ধরা হয়। আমাদের মধ্যে যারা মানসিক রোগী ভোগে তারা অনেকেই ভাবে যে অনেক ওষুধ খেতে হবে, ডাক্তার দেখাতে হবে, অনেকদিন সময় লাগবে রোগটি সারতে, হয়তোবা সারা জীবন ওষুধ খেতে হবে। এরকম বিভিন্ন চিন্তা অনেকে করে থাকে।
বিভিন্ন ক্ষেত্রে মানসিক রোগ বংশগতভাবে হয়ে থাকে। জীবনের শুরুতেই কোন ক্রমা বা ধাক্কার মুখে পড়লে মানুষ পুরোপুরি ডিপ্রেসড হয়ে যায়। তবে মানুষিক রোগে একটি রোগ এ থেকেও পরিত্রান পাওয়ার উপায় আছে এবং কিছু ওষুধ আছে। লোক থাকলে অবশ্যই চিকিৎসার কোনো না কোনো উপায় থাকবেই। মানুষের অতিরিক্ত চিন্তা থেকেই মানসিক রোগ হয়ে থাকে। এবং দ্রুত চিকিৎসা না করলে ভয়াবহ আকার ধারণ করতে পারে।
অধিকাংশ মানসিক রোগী নিজের সমস্যা পরিবারের কারো সাথে শেয়ার করতে পারেনা বা বলতে চায়না। তাই মানসিক কোন ধরনের দুশ্চিন্তা বা পেরেশানিতে পড়লে পরিবারের সাথে নিজের সমস্যা বলা উচিত এতে অধিকাংশ মানসিক রোগী সুস্থ হয়ে যায়। কিছু কিছু ক্ষেত্রে কারণ এবং ভিন্ন হয়ে থাকে। আজ সে সম্পর্কে এবং মানসিক রোগের ওষুধ সম্পর্কে জানতে পারবো।
মানসিক রোগের বিভিন্ন কারন
মানসিক রোগ খুবই জটিল একটি সমস্যা। আমাদের ইয়াং জেনারেশন এরমধ্যে প্রায় ৩৫ ভাগ মানুষ বিভিন্ন ধরনের মানসিক রোগের শিকার। এটি বিভিন্ন ধরনের ঘটনা, পরিবেশ, মানসিক আঘাত, স্ট্রেস বা ট্রমা এবং আরো নানা কারণে হয়ে থাকে। মানসিক রোগের কারণ চিহ্নিত করা দুষ্কর। তবে সাইক্রেটিক্সরা বেশ কিছু কারণ চিহ্নিত করেছে। মানসিক রোগের কিছু সম্ভাব্য কারণ আলোচনা করা হলো
জেনেটিক এনজাইটি: মানসিক অসুস্থতা বিভিন্ন ক্ষেত্রে পরিবার থেকে চলে আসে। যা বিকাশের সাথে সাথে চিমটি উপাদানের পরিমাণ বৃদ্ধি করে দেয়। বেশকিছু জিনের সংমিশ্রণে মানসিক রোগ বা অসুস্থতা বৃদ্ধিতে সংবেদনশীলতা বাড়িয়ে তুলে।
মস্তিষ্কে বিভিন্ন রাসায়নিক পরিবর্তন: মস্তিষ্কের নিউরোট্রান্সমিটার যমজ কিসের রাসায়নিক বার্তা বাহক এর মাত্রা কম বেশি হলে বা কার্যকলাপে পরিবর্তন ঘটলে মানসিক অসুস্থতা হতে পারে। হিরো রাসায়নিক পরিবর্তনের ফলে বিভিন্ন ধরনের বাইপলার ডিজঅর্ডার, বিষন্নতা, সিজোফ্রেনিয়া ইত্যাদি ধরনের মানসিক রোগ হতে পারে।
ট্রমা বা ভয়াবহ কোন ঘটনা: তোমার নানা কারণে হতে পারে। খুবই ছোট ঘটনা থেকেও মাথায় ট্রমা কাজ করতে পারে। যা শৈশবকালে বিকাশের সাথে সাথে মানসিক স্বাস্থ্যের উপর দীর্ঘস্থায়ী প্রভাব ফেলতে পারে। ট্রমার মধ্যে যে মানসিক রোগ গুলো পড়ে: মানসিক, শারীরিক, যৌ*ন নির্যাতন।
পরিবেশের বিভিন্ন উপাদানের কারণে: আমাদের দেশে বিভিন্ন ধরনের এক্সপোজার হয়ে থাকে। এগুলো পরিশোধন না করেই পরিবেশে ছড়িয়ে যাচ্ছে যেমন: সীসা, পারদ এগুলো খুবই মারাত্মক পরিবেশের উপাদান। এই পদার্থ গুলোর কিছু পরিমাণ দিয়ে শরীরের প্রবেশ করলে মানসিক বিকাশ করতে পারে। বিভিন্ন ধরনের শব্দ দূষণ, সবুজস্থানের অভাব এবং অন্ধকার পরিবেশ থেকে মানসিক রোগ অসুস্থতা বৃদ্ধি করতে পারি।
নেশা বা ড্রাগ জাতীয় বিভিন্ন ধরনের পদার্থ সেবন: বিভিন্ন ধরনের ড্রা*গ বা অ্যাল*কোহল মানসিক অসুস্থতা দ্বিগুণ করতে পারে। আমাদের মধ্যে অনেকেই বিভিন্ন ধরনের টেনশন বা ডিপ্রেশনে পড়লে নে*শার সহায়তা নিয়ে থাকে তারা ভাবে এসব দ্রব্য সেবন করলে মানসিক অসুস্থতা কম হতে পারে। কিন্তু এ সমস্ত দ্রব্য সেবনের ফলে মানসিক অসুস্থতা বেড়ে যায়।
মানসিক চাপ বা স্ট্রেস: বহুদিন ধরে কারো মধ্যে মানসিক চাপ বা ডিপ্রেশন থাকলে তার শারীরিক এবং মানসিক উভয় স্বাস্থ্যের উপর নীতিবাচক প্রভাব ফেলবে।এই মানসিক চাপ নানা প্রকার হতে পারে যেমন পরিবারের আর্থিক সংকট বা ইয়ং জেনারেশনের জন্য বিভিন্ন ধরনের দুশ্চিন্তা ভালো রেজাল্ট না করা ইত্যাদি।
বিভিন্ন ধরনের সামাজিক বিচ্ছিন্নতা: অনেকে আছে যারা তাদের আশেপাশের কাছ থেকে উপকার, সমর্থন, বা সাপোর্ট কিছুই পেয়ে থাকে না। তাই তারা নিজেকে খুবই ছোট এবং দুর্বল মনে করতে থাকে। এর ফলে বিভিন্ন ধরনের মানসিক সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়। এই সামাজিক বিচ্ছিন্নতা মানুষকে আ*ত্ম*হ*ত্যার বর্ধিত ঝুঁকের সাথে যুক্ত হতে পারে।
বিভিন্ন চিকিৎসার কারণ: শুধু যে অতিরিক্ত চিন্তাভাবনা এর জন্য মানসিক রোগ হয়তো নয়। আরো বেশ কিছু কারণে হতে পারে। যেমন: মস্তিষ্কের বিভিন্ন ধরনের আঘাত, মৃগী রোগ, পারকিনসন রোগ। এ রোগ গুলো মানসিক অসুস্থতা অনেক বাড়াতে পারে।
অস্বাভাবিক মাথার গঠন: জন্মগতভাবে অনেকের মস্তিষ্ক গঠন স্বাভাবিক হয়ে থাকে। যেমন কিছু মানুষের মাথা আকৃতি ছোট কিংবা অনেক বড় হয়ে থাকে। বিভিন্ন আঘাতের কোন মাথার পাকারাকৃতি পরিবর্তন হতে পারে যার ফলে মানসিক রোগী হতে পারে।
উন্নয়নমূলক বিভিন্ন ধরনের রোগ: অনেক উন্নয়নমূলক ব্যাধির বা রোগ রয়েছে যার ফলে মানসিক অসুস্থতা হয়ে থাকে। যেমন : এমন অনেকে মনোযোগ দিতে পারেন না এটি কে হাইপার একটিভিটি ডিজঅর্ডার বলে, আরো অটিজম স্পেকট্রাম ডিজঅর্ডার,এবং অনেকেই জন্মগতভাবে যে কোন জিনিস শিখতে অনেক সময় লাগে বা শিখতে পারেনা এগুলো মানসিক অসুস্থতা।
উপরের কারণগুলোর কারণে মানসিক রোগ হতে পারে এবং হয়ে থাকে। তবে অবশ্যই কারো মানসিক রোগের সমস্যা থাকলে কেউ তার সামনে বাপ পিঠ পিছে এ সম্পর্কে দয়া করে আলোচনা করবেন না। কারণ এ ধরনের পিঠ পিছ পিছ কথাগুলো মানসিক রোগীকে আরো বেশি অসুস্থ করে তোলে। মানসিক অসুস্থতার বিভিন্ন লক্ষণ রয়েছে।
মানসিক রোগের শারীরিক লক্ষণ
কোন একটি কারণে মানসিক রোগ হতে পারে। সাধারণ থেকে সাধারণ সমস্যাগুলো অতিরিক্ত চিন্তার ফলে মানসিক অসুস্থতার বা রোগের আকার ধারণ করতে পারে। অনেক রকমের মানসিক অসুস্থতা রয়েছে তবে প্রতিটি প্রতিটি কারণের সাথে শারীরিক এবং মানসিক ভাবে বিভিন্ন সমস্যার সম্মুখীন হতে পারে। মানসিক রোগীর আক্রান্ত রোগীদের কি কারনে রোগ হয়েছে বা এর লক্ষণ খুঁজে বের করা কষ্টসাধ্য তবে মানসিক চিকিৎসকরা লক্ষণ চিহ্নিত করেছেন যা একজন মানসিক রোগে আক্রান্ত রোগীর মধ্যে থাকতে পারে।
- খাদ্যের প্রতি অনীহা বা ক্ষুধা কম লাগা
- ওজনের পরিবর্তন হয় বৃদ্ধি পাওয়া নয় কমে যাওয়া।
- ঘন ঘন পাতলা পায়খানা বা ডায়রিয়া হওয়া
- অনেক সময় কোন কারণ ছাড়াই বমি বমি ভাব হওয়া বা বমি হওয়া।
- বুক অতিরিক্ত ধরফর করা
- শরীরে বিভিন্ন স্থানে ব্যথা বা পেশি ব্যথা হওয়া
- মাঝে মাঝে অতিরিক্ত কাপুনি দিয়ে ওঠা শরীর
- মাত্র অতিরিক্ত ঘাম বের হওয়া
- নিঃশ্বাস নিতে কষ্ট হওয়া
- হয় অতিরিক্ত ঘুম নয় একদমই ঘুম না হওয়া
- যেকনো দুঃখ অবিরাম মনে পড়া।
- হুটহাট চরম মেজাজ খারাপ হওয়া
- মনোনিবেশে সমস্যা হওয়া সিদ্ধান্ত না নিতে পারা
- বিভিন্ন ধরনের হ্যালুসিনেট করা
- কারো উপর বিশ্বাস করতে না পারা
- শরীর বিভিন্ন অংশের ক্ষতি করা এবং বেঁচে থাকার ইচ্ছা না থাকা।
- বিভিন্ন ধরনের ট্রমা বা মানসিক চাপ অতিরিক্ত অনুভব করা।
মানসিক রোগ থেকে মুক্তির উপায়
মানসিক রোগ একটি জটিল রোগ তবে অবশ্যই এ থেকে পরিত্রাণ পাওয়া যেতে পারে। সকল রোগেরই চিকিৎসা রয়েছে। প্রাকৃতিক উপায়ে মানসিক অসুস্থতা থেকে মুক্তি পাওয়ার উপায় সম্পর্কে আলোচনা করব
- নিয়মিত শরীর চর্চা করা: ডেইলি এর থেকে দেড় ঘন্টা হাটা। কিছু সাধারন ব্যায়াম করা। এটি মেজাজ উন্নত থাকবে বিভিন্ন ধরনের বিষন্নতা থেকে মুক্তি পাওয়া যাবে।
- পর্যাপ্ত ঘুম: মানসিক রোগের অন্যতম কারণ হচ্ছে ঘুম কম হওয়া বা বেশি হওয়া। তাই সঠিক সময়ে ঘুমাতে যাও এবং সঠিক সময় ওঠা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। নিয়মিত ৮ থেকে ১০ ঘণ্টা ঘুমানোর চেষ্টা করুন।
- পুষ্টি জাতীয় খাবার গ্রহণ: প্রচুর পরিমাণ ফলমূল এবং চরবিহীন প্রোটিন যুক্ত খাবার খেতে হবে। এতে শক্তি বৃদ্ধি পাবে দেহের এবং মন মেজাজ ফুরফুরে থাকবে।
- সকলের সাথে সময় কাটানো: মানসিক অসুস্থতা হলে মানুষ নিজেকে আলাদা করে দেয়। তাই মানসিক অসুস্থতা থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য সকলের সাথে মিশা এবং বাইরে বন্ধুদের সাথে মেলামেশা করা দেওয়া জরুরি।
- নে*শা দ্রব্য এড়িয়ে চলা: যেকোনো ধরনের নে*শার দ্রব্য আপনার মানসিক দ্বিগুণ করতে পারে। কখনোই নে*শা দ্রব্য কারো মানসিক অসুস্থতার নিরাময় করতে পারে না।তাই এ থেকে বিরত থাকা উত্তম।
- বিভিন্ন ধরনের ক্রিয়াকলাপে অংশগ্রহণ: যেকোনো ধরনের সৃজনশীল ক্রিয়াকলাপ যেমন নাচ, গান, কবিতা, অংকন। যেকোনো ধরনের সৃজনশীল কাজী নিজেকে নিয়োজিত রাখা। এবং একটি লক্ষ্য স্থির রেখে কাজ করা।
- চিকিৎসকের পরামর্শ: মানসিক রোগের অনেক ডাক্তার আছে। তাই যেকোনো ধরনের মানসিক চাপে অবশ্যই চিকিৎসকের সাথে একটি অ্যাপার্টমেন্ট রাখুন এবং তাদের বিস্তারিত সমস্ত কিছু খুলে বলুন।
মানসিক রোগের ঔষধের নাম
মানসিক রোগের ও বেশ কিছু ওষুধ রয়েছে তবে এগুলো সেবন না করে প্রাকৃতিক উপায়ে মানসিক রোগ থেকে পরিত্রাণ পাওয়ার উত্তম। এবং চেষ্টা করুন যেকোনো ধরনের সমস্যা হতে এবং তা থেকে বেরিয়ে আসার জন্য চেষ্টা করুন। মানসিক রোগের বেশ কিছু ওষুধ রয়েছে। নিচে তাদের তালিকা দেওয়া হলঃ
- Residon 2
- Residon 4
- Deprex 5
- Nexcital 10
- Oxapro 10
- Oxat 20
- Qupex 200
সর্তকতা :যেকোনো প্রকারের ওষুধ সেবনে পূর্বে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
সর্বশেষ কথা
আজকাল সকলে বিভিন্ন ধরনের মানসিক চাপের মধ্যে পড়ে নিজেকে একা একা অনুভূত করে। এবং বিভিন্ন ধরনের দুশ্চিন্তা থেকে ডিপ্রেশন, অ্যাংজাইটি বিভিন্ন ধরনের সমস্যার সম্মুখীন হয়। সমস্যাগুলো থেকে বেরিয়ে আসার চেষ্টা করুন। এবং নিজেকে হাসি খুশি রাখার চেষ্টা করুন। কিছু মানসিক রোগ জন্মগতভাবে হলেও এ রোগের চিকিৎসা রয়েছে। আজকে আর্টিকেল থেকে আশা করি সকলে কিভাবে মানসিক অসুস্থতা থেকে পরিত্রাণ পাওয়া যাবে এবং মানসিক রোগের ঔষধ সম্পর্কে অবগত হয়েছেন।
আরও পড়ুনঃ
ঠান্ডা কাশির ঔষধের নাম | শিখে নিন ঠান্ডা কাশি দূর করার ঘরোয়া উপায়
টনসিল এর ঔষধ | গলা ব্যাথার ঔষধের নাম ও ঘরোয়া চিকিৎসা
এলার্জি ঔষধ এর নাম বাংলাদেশ ২০২৩ | এলার্জির সবচেয়ে ভালো ঔষধ