ডায়াবেটিস র*ক্তে শর্করার মাত্রা বৃদ্ধি করে এমন একটি দীর্ঘস্থায়ী অবস্থা। র*ক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণ না করলে এটি গুরুতর স্বাস্থ্য জটিলতার দিকে নিয়ে যেতে পারে, যার মধ্যে রয়েছে হৃদরোগ, স্ট্রোক, কিডনি রোগ, অন্ধত্ব এবং পায়ের ক্ষতি। বর্তমানে বেশিরভাগ মানুষ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হচ্ছে, যার ফলে মানুষের ভিতরে মৃত্যু নিয়ে ভয় কাজ করছে। অনেক সচেতন ব্যক্তি জানতে চাচ্ছেন ডায়াবেটিস লেভেল কত হলে একজন ব্যক্তি মারা যায়। তাদের জন্য আজকের এই পোস্টে উল্লেখ করা হয়েছে, ডায়াবেটিস কত হলে একজন ব্যক্তি মারা যায় ও কিভাবে ডায়াবেটিস লেভেল কমিয়ে আনতে পারবেন তার বিস্তারিত তথ্য। অন্যদিকে আপনারা জানতে পারেন ভরা পেটে ডায়াবেটিস কত হলে নরমাল তার তথ্য।
ডায়াবেটিসের দুটি প্রধান ধরণ রয়েছে-
টাইপ ১ ডায়াবেটিস: এটি একটি অটোইমিউন রোগ যা শরীরের ইনসুলিন উৎপাদনকারী কোষগুলিকে ধ্বংস করে। ইনসুলিন হল একটি হরমোন যা র*ক্তে শর্করাকে কোষে প্রবেশ করতে সহায়তা করে, যেখানে এটি শক্তির জন্য ব্যবহৃত হয়। টাইপ ১ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত ব্যক্তিদের ইনসুলিন থেরাপি গ্রহণ করতে হবে।
টাইপ ২ ডায়াবেটিস: এটি সবচেয়ে সাধারণ ধরণের ডায়াবেটিস। এটি ইনসুলিন প্রতিরোধের কারণে হয়, যার অর্থ শরীর ইনসুলিনের প্রভাবের প্রতি সঠিকভাবে সাড়া দেয় না। টাইপ ২ ডায়াবেটিস প্রায়শই জীবনধারার পরিবর্তন, যেমন স্বাস্থ্যকর খাদ্য গ্রহণ এবং নিয়মিত ব্যায়ামের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণ করা যেতে পারে। তবে কিছু ক্ষেত্রে, ওষুধেরও প্রয়োজন হতে পারে।
ডায়াবেটিসের কোন প্রতিকার নেই। তবে এটি ঔষধ, জীবনধারার পরিবর্তন এবং নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষার মাধ্যমে সফলভাবে পরিচালনা করা যেতে পারে। আপনার যদি ডায়াবেটিস থাকে, তাহলে আপনার ডাক্তারের সাথে একটি চিকিৎসা পরিকল্পনা তৈরি করা গুরুত্বপূর্ণ। যা আপনাকে আপনার র*ক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখতে এবং জটিলতা এড়াতে সহায়তা করবে।
ডায়াবেটিস কত হলে মানুষ মারা যায়
একজন ডায়াবেটিস রোগীর ডায়াবেটিস ৪০ mg/dl এর নিচে অথবা ৪০০ mg/dl এর চেয়ে বেশি হলে যেকোন সময় রোগী স্ট্রোক করে মৃত্যু হতে পারে। তাই আপনারা আপনাদের কাছের মানুষের ডায়াবেটিস লেভেল প্রতিনিয়ত চেক করবেন। কারণ অতিরিক্ত ডায়াবেটিস লেভেল বেড়ে গেলে যে কোন সময় দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। আপনি আপনার খাদ্য অভ্যাস, জীবন ধারার বিভিন্ন জিনিস পরিবর্তন করে ডায়াবেটিস লেভেল কমিয়ে আনতে পারবেন।
ডায়াবেটিস রোগীর র*ক্তে শর্করার মাত্রা কতটা বেশি হলে, জীবনের শেষ প্রান্তে চলে যাবেন তা নির্ধারণ করা অসম্ভব। কারণ এটি নির্ভর করে অনেকগুলো বিষয়ের উপর, যার মধ্যে রয়েছে:
- ডায়াবেটিসের ধরণ: টাইপ ১ ডায়াবেটিস রোগীদের টাইপ ২ ডায়াবেটিস রোগীদের তুলনায় জীবনের শেষ প্রান্তে চলে যাওয়ার ঝুঁকি বেশি থাকে।
- রোগের দৈর্ঘ্য: যারা দীর্ঘদিন ধরে ডায়াবেটিসে আক্রান্ত, তাদের জীবনের শেষ প্রান্তে চলে যাওয়ার ঝুঁকি বেশি থাকে।
- র*ক্তে শর্করার নিয়ন্ত্রণ: যাদের র*ক্তে শর্করার মাত্রা ভালভাবে নিয়ন্ত্রণে থাকে, তাদের জীবনের শেষ প্রান্তে চলে যাওয়ার ঝুঁকি কম থাকে।
- অন্যান্য স্বাস্থ্য সমস্যা: যাদের উচ্চ র*ক্তচাপ, উচ্চ কোলেস্টেরল বা কিডনি রোগের মতো অন্যান্য স্বাস্থ্য সমস্যা থাকে, তাদের জীবনের শেষ প্রান্তে চলে যাওয়ার ঝুঁকি বেশি থাকে।
- জীবনধারা: ধূমপান, অস্বাস্থ্যকর খাদ্য গ্রহণ এবং নিয়মিত ব্যায়াম না করার মতো অস্বাস্থ্যকর জীবনধারা, জীবনের শেষ প্রান্তে চলে যাওয়ার ঝুঁকি বাড়ায়।
তবে, ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য কিছু সাধারণ পরিসংখ্যান রয়েছে:
- আমেরিকান ডায়াবেটিস অ্যাসোসিয়েশনের মতে, টাইপ ১ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত প্রাপ্তবয়স্কদের গড় আয়ু 20 বছর কম।
- টাইপ ২ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত প্রাপ্তবয়স্কদের গড় আয়ু 7-10 বছর কম।
ডায়াবেটিস এর লক্ষণগুলো
এখানে ডায়াবেটিস রোগের অনেকগুলো প্রধান লক্ষণ উল্লেখ করা হয়েছে। আপনারা যারা মনে করছেন আপনার ডায়াবেটিস হয়েছে। তারা চাইলে নিচের তালিকার সাথে উল্লেখিত লক্ষণগুলো মিলিয়ে দেখতে পারেন।
- বার বার প্রস্রাবের বেগ পাওয়া।
- অল্পতেই ক্লান্ত হয়ে যাওয়া।
- ওজন হ্রাস পাওয়া।
- শরীরে কোনো ঘা শুকাতে দেরী হওয়া।
- অধিকতর তৃষ্ণা পাওয়া।
- দৃষ্টি ঝাপসা হয়ে যায়।
- অতিরিক্ত ক্লান্ত লাগে।
- হাত পা অসার অসার হয়ে আসে।
- ত্বক স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি শুষ্ক হয়ে যায়।
- শরীরে স্বাভাবিকের চেয়ে অধিক সংক্রমণ হয়।
ডায়াবেটিস এমন একটি রোগ, যার ফলে মারাত্মক সব জটিলতার সৃষ্টি হয়। যেমন-
- মৃত্যু ঝুঁকি বেড়ে যায়।
- অন্ধ হয়ে যাওয়ার ঝুঁকি রয়েছে।
- কিডনি নষ্ট হয়ে যেতে পারে।
- শরীরের কোনো স্থানে কেটে গেলে, তা ভালো হতে চায় না ফলে পঁচন ধরার ভয় থাকে।
- অল্পতেই শরীর ও চেহারা নষ্ট হয়ে যায় বা বুড়িয়ে যায়।
- শরীর দূর্বল হয়ে যায়।
- হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়৷
ডায়াবেটিস কমানোর উপায়
আপনি আপনার ডায়াবেটিস কমিয়ে আনতে চাইলে। আপনাকে নিম্নে উল্লেখিত বিষয় সমূহ সর্বদা অনুসরণ করতে হবে। অন্যথায় আপনার ডায়াবেটিস লেভেল বাড়তেই থাকবে।
- ব্যায়াম
- খাদ্যাভ্যাস নিয়ন্ত্রণ
- ওজন সামঞ্জস্য রাখা
- পরিমিত ঘুম
- রাত না জাগা
- ভোরে উঠা
- ভেজাল খাদ্য পরিহার
- সময়মতো খাবার গ্রহণ
- মদ্যপান, নেশা ও ধূমপান ত্যাগ
- চর্বি ও ফ্যাট জাতীয় খাদ্য পরিহার
- কোমল পানীয় পরিত্যাগ
- চিকিৎসকের পরামর্শ মেনে চলা
এই পরিসংখ্যানগুলি কেবলমাত্র গড় এবং ব্যক্তিভেদে ব্যাপকভাবে পরিবর্তিত হতে পারে। ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য সর্বোত্তম ফলাফল অর্জনের জন্য তাদের র*ক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখা, একটি স্বাস্থ্যকর জীবনধারা বজায় রাখা এবং নিয়মিত ডাক্তারের সাথে দেখা করা গুরুত্বপূর্ণ।