চিকেন পক্স বা জল বসন্ত খুবই ছোঁয়াচে এবং যন্ত্রণাদায়ক একটি রোগ। এই রোগটি খুবই দ্রুত সংক্রামিত হয়ে থাকে। এই রোগটি ভেরিসেলা নামক ভাই*রাস থেকে উৎপত্তি হয়। সাধারণত এই রোগটি জীবন দশায় একবার ওই হয়ে থাকে। এই রোগটি বেশিরভাগ ক্ষেত্রে ১৫ বছরের নিচে শিশুদেরকে বেসি আক্রমণ করে থাকে। তবে সকল বয়সী মানুষের ওই জল বসুন্ধরা চিকেন পক্স হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এই রোগটি বেশিরভাগ ক্ষেত্রে বসন্তকালে আবহাওয়া পরিবর্তনের সাথে সাথে দেখা দেয়।
বেশিরভাগ ক্ষেত্রে আবহাওয়া পরিবর্তন এর জন্যই এই রোগটি বেশি প্রকোপ আকার ধারণ করে। তাই চিকেন পক্সের যে কোন লক্ষণ দেখা দিলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত। এই আর্টিকেলের চিকেন পক্সের লক্ষণ, ঔষধ, খাদ্য তালিকা, চিকিৎসা সবকিছু নিয়ে আলোচনা করব।
চিকেন পক্স রোগের লক্ষণ
এই রোগটি একটি ভাই*রাসজনিত রোগ। তাই এই রোগের বা আক্রান্ত রোগীর সংস্পর্শে আসার পর খুব দ্রুত এই রোগের লক্ষণগুলো প্রকাশ পেয়ে থাকে।
- এ রোগের প্রথম লক্ষণ দুই থেকে তিন দিন আগে জ্বর আসবে।
- প্রচন্ড মাথা ব্যাথা সহ গলা ব্যথা থাকবে
- সারা শরীর বিভিন্ন অঙ্গ ব্যথা হতে পারে
- সরাসরি বিভিন্ন ফুসকুড়ি বের হয়
- প্রচন্ড চুলকানি ও সারা শরীর জ্বালাপড়া করে।
- ফুস*কুড়ি থেকে পানি বের হয়।
- ফুসকুড়ি শুকনো কালো রঙের খোসা তৈরি করে।
- সারা শরীরে প্রত্যেকটি জায়গায় ফুসকুড়ি ছড়িয়ে পড়বে।
বিশেষ দ্রষ্টব্য: রোগীর ক্ষেত্রে শুধু ফুসকুড়ি এবং জোর দেখা দেয় অন্য কোন লক্ষণ প্রকাশ পায় না।
পক্স বা বসন্ত রোগের কারণ
পক্স বা বসন্ত যেহেতু ভাই*রাস জনিত একটি রোগ। রোগের কারণগুলো বিভিন্ন পক্সের ক্ষেত্রে বিভিন্ন হয়ে থাকে। পক্সের বেশ কিছু উপকার রয়েছে তার মধ্যে জল বসন্ত বা চিকেন পক্স, গুটি বসন্ত বা স্মল ফক্স, মানকিপক্স, সিফিলিস। জল বসন্তের ক্ষেত্রে এই ভাই*রাসটি সংক্রমিত হতে আক্রান্ত ব্যক্তির সংস্পর্শ হাঁচি কাশি এবং নিঃশ্বাস-প্রশ্বাস এর মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়তে পারে। গুটি বসন্ত ভাই*রাসটি ভেরিওলা ভাই*রাস দ্বারা সৃষ্টি হয়ে থাকে। এই ভাই*রাসটি সংক্রান্ত ব্যক্তির শ্বাস প্রশ্বাস বা শরীরের ফুসকুড়ির তরল অংশ থেকে ছড়িয়ে পড়তে পারে।
এক সময় এই ভাই*রাসটি মহামারী আকার ধারণ করেছিল। এবং বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে গিয়েছিল। সুভাগ্যবশত সকল দেশে এখন গুটি বসন্তের টিকা প্রস্তুত রয়েছে। মানকি পক্স ভাই*রাসটি খুবই দ্রুত সংক্রমিত হয় এটি সাধারণত প্রাণী বা দূষিত পদার্থের সংস্পর্শে মানুষের মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়তে পারে। সিফিলিস এ রোগটি সাধারণত যৌ*ন সংক্রমিত সংক্রমণ ট্রপোনেমা প্যালিডাম ভিক্টোরিয়া দ্বারা ছড়িয়ে পড়ে। এই রোগটি মা থেকে গর্ভাবস্থায় শিশু কাছে যেতে পারে। বসন্ত রোগ যেহেতু ভাই*রাস বা ব্যাকটেরিয়া দ্বারা সৃষ্টি হয় সুতরাং বিভিন্ন ধরনের সূত্রপাত ধরে এই রোগটি ছড়িয়ে পড়তে পারে।
বসন্ত বা পক্স রোগের প্রকারভেদ
বসন্ত বা পক্স এক ধরনের নয় ধরনের হয়ে থাকে। যেমন : জল বা চিকেন পক্স গুটি বসন্ত, মাঙ্কি ফক্স, কাউ ফক্স। এদের কাজ এবং ছড়িয়ে পড়ার কার্যক্ষমতা ভিন্ন হয়ে থাকে।
চিকেন পক্স: এটি সাধারণত ভেরিসেলা জেস্টার ভাই*রাসের সংস্পর্শে আসার কিছুদিনের মধ্যে দেখা যায়। চিকিৎসকের মধ্যে 10 থেকে 12 দিন পর এটি তারা আসল রূপ ধারণ করে। এ রোগের প্রথম উপসর্গ হলো জ্বর এবং মাথা ব্যাথা সহ গলা ব্যথা এবং খুবই খাদ্যের প্রতি অনীহা। এ রোগে সারা শরীরে ছোট ছোট লাল ফুসকুড়ি ছড়িয়ে পড়ে। মুখ, বুক, পিঠ সব জায়গায় সরে পড়তে পারে। ফুসকুড়িগুলো থেকে চুলকানি ও জ্বালাপোরা করতে থাকে।
স্মল পক্স: স্মল পক্স বা গুটি বসন্ত ভ্যািরওলা ভাই*রাস দ্বারা সংক্রামিত হয়ে থাকে। এ রোগটি খুবই মারাত্মক এবং প্রচুর সংক্রামিত একটি রোগ। এই রোগটি সংক্রামিত হওয়ার সাথে সাথে খুব দ্রুত সারা শরীরে সরিয়ে পড়ে। এ রোগে প্রচন্ড মাথা ব্যথা, পেশি ব্যথা ও জ্বর অস্বস্তি শুরু হয় সারা শরীরে। ফুসকুড়ি গুলো ম্যাকুলুস থেকে প্যাপিউল এরপর ভ্যাসিকল থেকে অগ্রসর হয়ে শেষ পর্যন্ত স্ক্যাব হয়ে যায়। এরা আরো কিছু উপসর্গ হচ্ছে প্রচন্ড বমি, পেট ব্যথা এবং ডায়রিয়া পর্যন্ত হতে পারে।
মানকি পক্স: এ বক্সটি খুবই বিরল একটি রোগ। এটি গুটি বসন্ত বা স্মল পক্স এর মত এত গুরুতরও নয়। তবে এরও কেউ জ্বর সহ মাথা ব্যথা, পেশি ব্যথা, পিঠে ব্যথা, ঠান্ডা লাগা ও ক্লান্তি অনুভব হয়। এ লোকটি প্রথমে মুখ থেকে শুরু করে তারপর সারা শরীরে সরিয়ে পড়ে।
আরো বেশ কিছু পক্স বা বসন্ত রোগ রয়েছে সেগুলোর ক্ষেত্রেও সর্বপ্রথম জ্বর থেকে শুরু করে দেহের বিভিন্ন স্থানে ফুসকুড়ি ছড়িয়ে পড়ে। সাধারণত বসন্ত রোগ গুলো জীবন দশায় একবারই ঘটে থাকে দ্বিতীয়বার হওয়ার সম্ভাবনা নেই বললেই চলে। প্রত্যেকটি পক্সের টিকা বা ওষুধ বের হয়ে গেছে। সুতরাং টিকা গুলো নিয়ম অনুসারে চিকিৎসকের পরামর্শ দিয়ে থাকবেন। এবং পক্সের লক্ষণ গুলো দেখার সাথে সাথে ডক্টরের সাথে পরামর্শ করবেন।
পক্স বা বসন্ত রোগের চিকিৎসা
সাধারণত পক্স বা বসন্ত রোগের সুনির্দিষ্ট কোন চিকিৎসা নেই। তবে প্রত্যেকটি বসন্তের রোগের টিকা বা আন্টিডট বের হয়ে গেছে। তবে পক্স বা বসন্ত রোগের ক্ষেত্রে জ্বর বা অন্যান্য সাধারন সমস্যা গুলোর চিকিৎসা দেওয়া হয়। পক্স হলে সাধারণত শরীরে প্রচন্ড চুলকানি হয়ে থাকে। এজন্য চুলকানি কমানোর ওষুধ এবং মারাত্মক ক্ষেত্রে এন্টিভাই*রাস ওষুধ এবং ইমুনিগ্লোবিন ব্যবহৃত হয়। যেকোনো ধরনের পক্স করলে অবশ্যই অবলম্বন করতে হবে এবং মানুষ থেকে কিছুটা দূরত্ব বজায় রেখে চলতে হবে।
চিকেন পক্স বা জল বসন্তের ঔষধ
যেহেতু চিকেন পক্স বা জল বসন্তের কোন নির্দিষ্ট ওষুধ নেই। সুতরাং চিকিৎসকরা সাধারণ কিছু ওষুধ দিয়ে থাকে যাতে চুলকানি এবং জ্বর কম থাকে। ঔষধ গুলো হলোঃ
- Moxacil Tablet
- Napa tablet
- Paracetamol Tablet
- Histacin Tablet
- Virux Tablet
সতর্কতা : চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া কোন ধরনের ওষুধ বা ক্রিম ব্যবহার করবেন না।
চিকেন পক্স বা জল বসন্ত রোগের দাগ দূর করার ক্রিম
যেকোনো ধরনের পক্স রোগে শরীরে ফুসকুড়ি থেকে সারা শরীরে দাগ ছড়িয়ে পড়ে। এই দাগগুলো দূর করার জন্য চিকিৎসকরা কিছু ক্রিম সাজেস্ট করে থাকে।
- Batamason-N
- Soneta
- Skinova Antiseptic
- Berberis
এই ক্রিমগুলো ব্যবহার পূর্বে অবশ্যই গরম পানি দিয়ে গোসল করা উত্তম। অন্যদিকে Ocuvir 5% Cream চিকেন পক্স এর লোশন হিসাবে ব্যবহার করা হয়।
চিকেন পক্স নিয়ে কিছু প্রশ্ন ও উত্তর
প্রশ্ন ১: চিকেন পক্স কী?
উত্তর: চিকেন পক্স হলো একটি সংক্রামক ভাই*রাস যা ফুসকুড়ি এবং চুলকানি সৃষ্টি করে। এটি একটি সাধারণ শিশুর রোগ, তবে বড়দেরও আক্রান্ত হতে পারে।
প্রশ্ন ২: চিকেন পক্সের কারণ কী?
উত্তর: চিকেন পক্সের কারণ হলো একটি ভাই*রাস যা varicella-zoster virus নামে পরিচিত। এই ভাই*রাসটি বাতাসের মাধ্যমে বা আক্রান্ত ব্যক্তির ত্বকের ক্ষত থেকে ছড়িয়ে পড়তে পারে।
প্রশ্ন ৩: চিকেন পক্সের লক্ষণ কী কী?
উত্তর: চিকেন পক্সের লক্ষণগুলির মধ্যে রয়েছে:
- জ্বর: জ্বর সাধারণত চিকেন পক্সের প্রথম লক্ষণ।
- মাথাব্যথা: মাথাব্যথাও চিকেন পক্সের একটি সাধারণ লক্ষণ।
- সারা শরীরে ক্লান্তি: সারা শরীরে ক্লান্তিও একটি সাধারণ লক্ষণ।
- শ্বাসকষ্ট: শ্বাসকষ্টও চিকেন পক্সের একটি সাধারণ লক্ষণ।
- মুখ, গলা এবং ঠোঁটে ফুসকুড়ি: চিকেন পক্সের প্রথম ফুসকুড়িগুলি সাধারণত মুখ, গলা এবং ঠোঁটে দেখা যায়।
- শরীরে ফুসকুড়ি: ফুসকুড়িগুলি সাধারণত কয়েক দিনের মধ্যে শরীরে ছড়িয়ে পড়ে।
- ফুসকুড়ি চুলকানি: ফুসকুড়িগুলি খুব চুলকানি হতে পারে।
প্রশ্ন ৪: চিকেন পক্সের চিকিৎসা কী?
উত্তর: চিকেন পক্সের কোনো নির্দিষ্ট চিকিৎসা নেই। চিকিত্সা সাধারণত লক্ষণগুলির চিকিৎসার উপর দৃষ্টি নিবদ্ধ করে।
- ব্যথানাশক ওষুধ: ব্যথা এবং অস্বস্তি কমাতে ব্যথানাশক ওষুধ ব্যবহার করা যেতে পারে।
- চুলকানি উপশমকারী: চুলকানি উপশম করতে চুলকানি উপশমকারী ব্যবহার করা যেতে পারে।
- জল দিয়ে ত্বক ধুয়ে ফেলা: ফুসকুড়িগুলি জীবাণুমুক্ত রাখতে জল দিয়ে ত্বক ধুয়ে ফেলা গুরুত্বপূর্ণ।
প্রশ্ন ৫: চিকেন পক্স থেকে কীভাবে সুরক্ষিত থাকবেন?
উত্তর: চিকেন পক্স থেকে সুরক্ষিত থাকার জন্য নিম্নলিখিত পদক্ষেপগুলি নেওয়া যেতে পারে:
- চিকেন পক্সের টিকা দেওয়া: চিকেন পক্সের টিকা দেওয়া চিকেন পক্সের বিরুদ্ধে ৯০% সুরক্ষা প্রদান করে।
- চিকেন পক্সে আক্রান্ত ব্যক্তি থেকে দূরে থাকা: চিকেন পক্সে আক্রান্ত ব্যক্তি থেকে দূরে থাকা চিকেন পক্সের সংক্রমণ প্রতিরোধ করতে সাহায্য করতে পারে।
প্রশ্ন ৬: চিকেন পক্সের জটিলতা কী কী?
উত্তর: চিকেন পক্সের কয়েকটি জটিলতা হতে পারে, যার মধ্যে রয়েছে:
- সেকেন্ডারি সংক্রমণ: ফুসকুড়িগুলি ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণের জন্য সংবেদনশীল।
- ব্রঙ্কপ: ব্রঙ্কপ চিকেন পক্সের একটি গুরুতর জটিলতা।
- এনসেফালাইটিস: এনসেফালাইটিস হলো মস্তিষ্কের একটি সংক্রমণ যা চিকেন পক্সের একটি বিরল জটিলতা।
- জটিলতা
চিকেন পক্স একটি সাধারণ শিশুর রোগ যা প্রাপ্তবয়স্কদেরও আক্রান্ত করতে পারে। চিকেন পক্সের কোনো নির্দিষ্ট চিকিৎসা নেই, তবে লক্ষণগুলির চিকিৎসা করা যেতে পারে। চিকেন পক্স থেকে সুরক্ষিত থাকার জন্য চিকেন পক্সের টিকা দেওয়া এবং চিকেন পক্সে আক্রান্ত ব্যক্তি থেকে দূরে থাকা গুরুত্বপূর্ণ।
পরিশেষের কথা
চিকেন পক্স যেহেতু খুবই ছোয়াচে একটি রোগ এবং দ্রুত সংক্রামিত হয়। সুতরাং যার সংক্রমিত হয় তার মানুষজন থেকে দূরত্ব অবলম্বন করা উচিত। এবং আমাদেরও উচিত সংক্রামিত রোগী থেকে দূরত্ব বজায় রাখা। এ রোগ হাঁচি কাশি সহ নিঃশ্বাস-প্রশ্বাস এর মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে সুতরাং অবশ্য সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। আশা করি আজকে আপনাদের বিভিন্ন ধরনের পক্স সম্পর্কে এবং এর ওষুধ ও লক্ষণ সম্পর্কে জানতে সাহায্য করেছি। এতদূর মনোযোগ সহকারে পড়ার জন্য সকলকে ধন্যবাদ।
আরও জানুনঃ
মানসিক রোগের ঔষধের নাম | দেখুন শারীরিক লক্ষণ ও মুক্তির উপায়
ঠান্ডা কাশির ঔষধের নাম | শিখে নিন ঠান্ডা কাশি দূর করার ঘরোয়া উপায়