ঈদুল ফিতরের নামাজ হলো ইসলামের একটি গুরুত্বপূর্ণ নামাজ যা রমজান মাস শেষে পালিত হয়। এটি দুই রাকাত ফরজ নামাজ এবং ঈদের খুতবার সমন্বয়ে গঠিত। ঈদের নামাজের নির্দিষ্ট কিছু নিয়ম রয়েছে যেগুলো পালন করা আবশ্যক। আমরা বছরে দুইটি ঈদ পালন করে থাকি। যার জন্য আমরা অনেকেই ঈদের নামাজ পড়ার নিয়ম ভুলে যাই। আপনাদের জন্য এখানে দেওয়া হয়েছে কিভাবে ঈদের নামাজ পড়বেন। ঈদের নামাজ পড়তে কয়টি তাকবীর দিতে হয় ও ঈদের নামাজ না পড়লে গুনাহ হবে কিনা এ বিষয়ে তথ্য দেওয়া হয়েছে।
ঈদুল ফিতরের নামাজের নিয়ম
ঈদের নামাজের সময়: ঈদের নামাজের ওয়াক্ত সূর্যোদয়ের পর থেকে শুরু হয় এবং সূর্য পূর্ব দিকে ঝুঁক না হওয়া পর্যন্ত অব্যাহত থাকে। তবে, সকাল সূর্যোদয়ের পর কিছুক্ষণ সময় অপেক্ষা করে নামাজ আদায় করা উত্তম।
ঈদের নামাজের স্থান: ঈদের নামাজ সাধারণত ঈদগাহে জামা’আতের সাথে আদায় করা হয়। তবে, যদি ঈদগাহে যেতে না পারেন, তাহলে যেকোনো পরিষ্কার স্থানে জামা’আত বা একা নামাজ পড়তে পারেন।
গোসল: ঈদের নামাজের পূর্বে গোসল করা সুন্নত।
পোশাক: ঈদের নামাজের জন্য পবিত্র ও পরিষ্কার পোশাক পরিধান করা উত্তম। পুরুষদের জন্য সুন্নত হলো সাদা পাঞ্জাবি ও টুপি পরা।
ঈদুল ফিতরের নামাজের নিয়ত বাংলাতে
নিয়ত: ঈদের নামাজ আদায়ের পূর্বে নিম্নলিখিত নিয়ত করতে হবে:
“আমি আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য ঈদুল ফিতরের দুই রাকাত ফরজ নামাজ আদায় করছি।”
তাকবির: ঈদের নামাজে তাকবির (আল্লাহু আকবর) বলা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। প্রথম রাকাতে تكبيرة التحريم (তাহরিমার তাকবির) বলার পর আরও সাতবার তাকবির বলতে হবে। দ্বিতীয় রাকাতে কিয়ামের পর চারবার তাকবির বলতে হবে।
রুকু ও সিজদা: ঈদের নামাজের রুকু ও সিজদা অন্যান্য নামাজের মতোই আদায় করতে হবে।
খুতবা: ঈদের নামাজের পর খুতবা শোনা সুন্নত।
ঈদের নামাজের নিয়ম
প্রথম রাকাতের সানার পরে ২ বার কান পর্যন্ত হাত তুলে ছেড়ে দিব। ৩য় তাকবীরে হাত বেঁধে ফেলব। আর ২য় রাকাতে রুকুর আগে ৩বার তাকবীরের সময়ই কান পর্যন্ত হাত তুলে হাত ছেড়ে দিব। চতুর্থ তাকবীরের সময় রুকুতে যাব। আল্লাহ আমাদেরকে সঠিক ভাবে ঈদের সালাত আদায় করার তাওফিক দান করুন। আমীন।
ঈদের নামাজ কয় তাকবীর
ইমাম সাহেব তাকবীরে তাহরিমা “আল্লাহু আকবার” বলে নামাজ শুরু করবেন। উপস্থিত সকল মুক্তাদি তার সঙ্গে তাকবিরে তাহরিমা বলে নামাজ শুরু করবেন। এরপর অন্যান্য নামাজের ন্যায় ইমাম সাহেবসহ সকলেই মনে মনে “সানা” পড়বেন।
১ম রাকাত : অতিরিক্ত ৩টি তাকবীর
- “সানা” পড়া শেষ হলে ইমাম সাহেব ৩ বার “”আল্লাহু আকবার”” বলে তাকবীর দিবেন। মুক্তাদিরাও সকলে তার সঙ্গে তাকবীর বলবেন। অন্য সকল নামাজের মতোই এখানেও ইমাম সাহেব জোরে তাকবীর বলবেন আর মুক্তাদিরা আস্তে তাকবীর বলবেন।
- প্রথম তাকবীরের সময় কান পর্যন্ত হাত উঠিয়ে হাত ছেড়ে দিতে হবে।
- দ্বিতীয় তাকবীরের সময় কান পর্যন্ত হাত উঠিয়ে হাত ছেড়ে দিতে হবে।
- তৃতীয় তাকবীরের সময় কান পর্যন্ত হাত উঠিয়ে হাত নাভির নিচে বেঁধে নিতে হবে। (প্রথম ২ তাকবীরের মত হাত ছেড়ে দেয়া যাবে না)
- এরপর ইমাম সাহেব সূরা ফাতিহা পড়বেন এবং অন্য কোনো সূরা মিলাবেন। এরপর অন্যান্য সালাতের ন্যায় রুকু-সিজদা আদায় করে ইমাম সাহেব ১ম রাকাত শেষ করে ২য় রাকাতের জন্য দাঁড়াবেন। প্রতিটি ক্ষেত্রে মুক্তাদিরা যথারীতি ইমামের অনুসরণ করবেন।
২য় রাকাতঃ অতিরিক্ত ৩টি তাকবীর
- ২য় রাকাতের শুরুতে ইমাম সাহেব সূরা ফাতিহা পড়বেন। এরপর অন্য কোনো সূরা বা সূরার অংশ তিলাওয়াত করবেন। রুকুতে যাওয়ার আগে ইমাম সাহেব ৩টি অতিরিক্ত তাকবীর দেবেন। মুক্তাদিরাও তার সঙ্গে তাকবীর দেবেন।
- প্রথম তাকবীরের সময় কান পর্যন্ত হাত উঠিয়ে হাত ছেড়ে দেবেন।
- দ্বিতীয় তাকবীরের সময় কান পর্যন্ত হাত উঠিয়ে হাত ছেড়ে দেবেন।
- তৃতীয় তাকবীরের সময়েও কান পর্যন্ত হাত উঠিয়ে হাত ছেড়ে দেবেন।
- এরপর ইমাম সাহেব চতুর্থ তাকবীর বলবেন। এটি হচ্ছে মূলত রুকুতে যাওয়ার জন্য তাকবীর। এ তাকবীর শুনে আমরা রুকুতে চলে যাব। এরপর বাকি সকল নিয়মকানুন অন্যান্য নামাজের মতোই। সকলেই ইমামকে অনুসরণ করে ২ রাকাত নামাজ শেষ করবেন।
- সালতের পরে ইমাম সাহেব ২টি খুতবা দিবেন। খুতবা শোনা ওয়াজিব। অনেককেই দেখা যায় সালাত শেষে উঠে চলে যান। এটি গর্হিত অন্যায় একটি কাজ।
ঈদের সালাতে আমরা মূলত অতিরিক্ত তাকবীর নিয়ে দ্বিধাদ্বন্দ্বে ভুগে থাকি। অতিরিক্ত তাকবীরের সময় দেখা যায় কেউ হাত তুলে হাত ছেড়ে দেন, কেউ বা আবার বেঁধে ফেলেন। কেউ বা আবার ভুলে রুকুতে চলে যান। আশা করি আসন্ন ঈদের সালাতে আমাদের এই ভুলগুলো হবে না।
ঈদের দিনের কিছু করণীয়:
- ঈদের দিন সকালে সুবহে সাদিকের পূর্বে ঘুম থেকে উঠা এবং ফজরের নামাজ আদায় করা।
- ঈদের নামাজের পূর্বে গোসল করা এবং পরিষ্কার পোশাক পরিধান করা।
- ঈদের নামাজ জামা’আতের সাথে আদায় করা।
- ঈদের নামাজের পর খুতবা শোনা।
- ঈদের দিন সকালে ঈদুল ফিতরের ফিতরা প্রদান করা।
- ঈদের দিন আত্মীয়স্বজন ও বন্ধুবান্ধবের সাথে দেখা সাক্ষাৎ করা এবং একে অপরের প্রতি ভালোবাসা প্রকাশ করা।
- ঈদের দিন গরিব-দুঃখীদের খাওয়ানো।
- ঈদের নামাজ আদায়ের মাধ্যমে আমরা আল্লাহর রহমত ও ক্ষমা লাভ করতে পারি।
ঈদ মোবারক! কাছের সকল মানুষকে ঈদের শুভেচ্ছা জানাতে ভুলবেন না।