কৃমি মানব দেহের জন্য ক্ষতিকর প্রানী। আজকের ব্লগটি পড়ে জানতে কৃমির আক্রমণ সম্পর্কে জানতে পারবো। কিভাবে মানব দেহে থেকে কৃমি দূর করা যায় সেই সম্পর্কে জানবো। আপনারা যারা কৃমি রোগে আক্রান্ত হয়েছেন তারা জানতে পারবেন কিভাবে কৃমির ঔষধ ব্যবহার করতে হয়। কৃমির কি কি ঔষধ রয়েছে, কোন ঔষধ সবচেয়ে বেশি কার্যকরি সে সম্পর্কে জানতে পারবেন। সুতরাং কৃমি সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে ব্লগটি মনোযোগ সহকারে পড়ুন।
কৃমি হওয়ার কারণ
কৃমি মানব দেহের ক্ষতিকর পরজীবী। কৃমি হওয়ার প্রধান হচ্ছে নোংরা পরিবেশ। অপরিষ্কার থাকা, সঠিকভাবে সাবান দিয়ে হাত না ধুওয়া ইত্যাদি। আমাদের সমাজে কৃমি রোগ নিয়ে অনেকের ভুল ধারনা রয়েছে। যেমন মিষ্টি বেশি খাওয়া হলে কৃমি হয়, আবার বাচ্চাদের ক্ষেত্রে অনেকে মনেকরেন দাঁত কামড়ালে বা মুখ থেকে লালা ঝরলে কৃমি হয়েছে এগুলো ভুল ধারনা।
কৃমি রোগের লক্ষন
কৃমি হলে রোগীর দেহে অনেক ধরনের লক্ষন দেখা দেয়। এর মধ্যে রয়েছে পেটে ব্যাথা। কৃমির আক্রমণের ফলে ব্যাপকভাবে পেটব্যথা করে। কৃমির আক্রমণের ফলে রোগীর বমি হয়। এছাড়াও রয়েছে ক্ষুধামন্দা, শরীর দুর্বল অনুভুতি, ডাইরিয়া, র*ক্তশূন্যতা, ওজন কমে যাওয়া ইত্যাদি। বাচ্চাদের ক্ষেত্রে কৃমি শিশুর নাক, মুখ ও পায়খানার সাথে কৃমি বের হতে দেখা যায়।
কৃমি যেভাবে ছড়ায়
কৃমি হচ্ছে পরজীবি প্রানী। কৃমির হুক ওয়ার্মের একমাত্র খাবার হচ্ছে র*ক্ত। কৃমির সাধারনত আমাদের দেহে প্রবেশ করে খাদ্যদ্রব্য গ্রহনের মাধ্যামে। কৃমি ডিম খাবার, পানি,বাতাস,টয়লেটের কমোড,বাথরুমের দরজা,দরজার হ্যান্ডেল,পশুর লালা, বিড়াল গুরু কুকুরের লোমে ইত্যাদি জায়গায় থাকে।এই ডিম গুলো আমাদের খাবার গ্রহণের মাধ্যমে আমাদের দেহে প্রবেশ করে। এবং আমাদের দেহের সংক্রমণ বাড়ায় বংশবৃদ্ধি করে, দেহের অন্য অংশে ছড়িয়ে যায়।
কৃমির ঔষধের নাম
বাজারে অনেক ধরনের ক্রিমের ওষুধ রয়েছে।এখন আপনাদের মনে প্রশ্ন জাগতে পারে তাহলে কোন ওষুধটি সব থেকে ভালো। বড়দের কৃমির ওষুধের নাম,বাচ্চাদের জন্য কোন কৃমির ওষুধটি ভালো, কৃমির ঔষুধ খাওয়ার পরে ভিটামিন খেতে হবে কিনা ইত্যাদি।
কৃমির ঔষধের নাম সমূহ:
- 1.Albendzole
- 2.Mebendazole
- 3.Praziquantel
- 4.Ivermectine
- 5.Levamisol
অনেকের মনে প্রশ্ন থাকে এতগুলো কৃমির ওষুধের মধ্যে কোন ঔষধ সব থেকে ভালো। নিম্নে অনেক কার্যকরী কিছু ঔষধের নাম দেওয়া হলো:
- Almex tablet
- Albezen tablet
- Ben-A tablet
- Estazol tablet
কৃমির ঔষধ খাওয়ার নিয়ম
আবার অনেকের মনেই প্রশ্ন জাগে তাহলে বাচ্চাদের কৃমির ঔধের নাম কি? কিভাবে খেতে হবে। চিন্তার কোন কারণ নেই নিচে শিশুদের কৃমির ঔষধ ও সেবন বিধি দেওয়া হলো:
- ২-৫ বছরের বাচ্চাদের টিকা দিবসে টিকা কেন্দ্রে নিয়ে কৃমির ঔষধ খাওয়ানো সর্বোত্তম।
- প্রতি চার থেকে ছয় মাস পরপর কৃমির ঔষধ খাওয়ালে কৃমি সংক্রমণ বোধ করা সম্ভব।
অ্যালবেনডাজোলঃ বাজারে অ্যালবেনডাজোলকে এলবেন, সিনটেল ইত্যাদি নামে পাওয়া যায়। দুই বছরের বেশি বয়সী শিশুদের জন্য ৪০০ মি.গ্রাম ( দুই চামচ সিরাপ) ২ ডোজ। এক বছর থেকে দুই বছর বয়সী শিশুদের জন্য ১ ডোজ। তারপরও যদি সমস্যা মনে হয় তাহলে তিন সপ্তাহ পর আরো একবার খাওয়ানো যাবে।
লিভোমিসোলঃ শিশুর ওজনের উপর ভিত্তি করে লিভোমিসোল দেওয়া হয়। ১ কেজি ওজনের বাচ্চার জন্য ৩ মি.গ্রাম লিভোমিসোল ডোজ দেওয়া হয়।
মেবেনডাজেলঃ মেবেনডাজেল বাজারে মেবেন বা এরমক্স নামে পরিচিত।এটি ট্যাবলেট ও সিরাপ আকারে পাওয়া যায়। ২ বছরের বেশি বয়সী শিশুদের জন্য ১০০ মি.গ্রাম করে দিনে ২ বার পরপর ৩ দিন।
কৃমির সংক্রামন থেকে মুক্তির উপায়
কৃমি রোগ থেকে মুক্তির একমাত্র উপায় হচ্ছে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন থাকা। টয়লেট থেকে বের হওয়ার পর সাবান দিয়ে ভালোভাবে হাত ধৌত করা। নোংরা পরিবেশে না থাকা। হাত ধুয়ে খাবার খাওয়া। বাচ্চাদের খাওয়ানোর পূর্বে দুই হাত সাবান দিয়ে ভালোভাবে পরিষ্কার করা।
কৃমি সম্পর্কে প্রশ্ন ও উত্তর
প্রশ্ন: কৃমির ঔষধের নাম কী?
উত্তর: কৃমির ঔষধের অনেক নাম আছে। বাংলাদেশে সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত কৃমির ঔষধের মধ্যে রয়েছে অ্যালবেনডাজল, মেবেনডাজল, এবং প্যারামেকসামিন।
প্রশ্ন: কৃমির ঔষধ কখন খাওয়া উচিত?
উত্তর: কৃমির ঔষধ সাধারণত প্রতি তিন মাস পরপর খাওয়া উচিত। তবে, কৃমির সংক্রমণ বেশি হলে বা জটিল উপসর্গ দেখা দিলে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী কৃমির ঔষধ খাওয়া উচিত।
প্রশ্ন: কৃমির ঔষধ খাওয়ার নিয়ম কী?
উত্তর: কৃমির ঔষধ খাওয়ার নিয়ম নির্ভর করে ঔষধের ধরন এবং রোগীর বয়স ও ওজনের উপর। সাধারণত, কৃমির ঔষধ খাওয়ার নিয়ম নিম্নরূপ:
- অ্যালবেনডাজল: ১৫০ মিলিগ্রাম বড়ি বা ৫ মিলিগ্রাম/কেজি সিরাপ, একবারে খাওয়া।
- মেবেনডাজল: ১০০ মিলিগ্রাম বড়ি বা ৫ মিলিগ্রাম/কেজি সিরাপ, তিন দিন পরপর তিন দিন খাওয়া।
- প্যারামেকসামিন: ১০০ মিলিগ্রাম বড়ি বা ৫ মিলিগ্রাম/কেজি সিরাপ, তিন দিন পরপর দুই দিন খাওয়া।
প্রশ্ন: কৃমির ঔষধ খাওয়ার পর কী কী উপসর্গ দেখা দিতে পারে?
উত্তর: কৃমির ঔষধ খাওয়ার পর কিছু ক্ষেত্রে সামান্য উপসর্গ দেখা দিতে পারে, যেমন:
- বমি বমি ভাব
- বমি
- পেট ব্যথা
- ডায়রিয়া
এই উপসর্গগুলি সাধারণত ক্ষণস্থায়ী এবং নিজে থেকেই সেরে যায়। তবে, যদি উপসর্গগুলি দীর্ঘস্থায়ী হয় বা মারাত্মক হয়। তাহলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
প্রশ্ন: কৃমির ঔষধ খাওয়ার সময় কী কী সাবধানতা অবলম্বন করা উচিত?
উত্তর: কৃমির ঔষধ খাওয়ার সময় নিম্নলিখিত সাবধানতা অবলম্বন করা উচিত:
- ঔষধের নির্দেশাবলী সাবধানে পড়ে নিন এবং সে অনুযায়ী ঔষধ খান।
- ঔষধ খাওয়ার আগে যদি আপনার কোনো শারীরিক সমস্যা থাকে। তাহলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
- ঔষধ খাওয়ার পর প্রস্রাব এবং মলের রঙ পরিবর্তন হতে পারে। এটি ঔষধের সাধারণ পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া, তাই চিন্তিত হওয়ার কিছু নেই।
প্রশ্ন: কৃমির ঔষধ খাওয়ার পর কৃমি মলের সাথে বের হয়ে আসে কিনা?
উত্তর: হ্যাঁ, কৃমির ঔষধ খাওয়ার পর কৃমি মলের সাথে বের হয়ে আসতে পারে। তবে, সবসময়ই কৃমি মলের সাথে বের হয়ে আসে না। কৃমির আকারের উপর নির্ভর করে কৃমি মলের সাথে বের হয়ে আসতে পারে বা নাও পারে।
প্রশ্ন: কৃমির ঔষধ খাওয়ার পর কৃমি থেকে বাঁচতে কী কী করণীয়?
উত্তর: কৃমির ঔষধ খাওয়ার পর কৃমি থেকে বাঁচতে নিম্নলিখিত করণীয়:
- নিয়মিত হাত ধোয়া।
- খাবার ঢেকে রাখা।
- টয়লেট ব্যবহারের পর হাত ধোয়া।
- খালি পায়ে হাঁটা এড়িয়ে চলা।
- নিয়মিত পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন পরিবেশ বজায় রাখা।
কৃমির ঔষধ খাওয়ার মাধ্যমে কৃমি সংক্রমণ থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব। তবে, কৃমির ঔষধ খাওয়ার আগে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
উপরুক্ত আলোচনা থেকে জানতে পারলাম কৃমির রোগ কিভাবে ছড়ায়, কিভাবে প্রতিরোধ করা যায় আরো বিস্তারিত অনেক কিছু পোষ্টটি পড়ার জন্য ধন্যবাদ। এ ধরনের আরো পোস্ট পড়তে আমাদের সাথে থাকুন।
আরও দেখুনঃ
টনসিল এর ঔষধ | গলা ব্যাথার ঔষধের নাম ও ঘরোয়া চিকিৎসা
চুলকানি দূর করার ক্রিম ও ঔষধ এর নাম ২০২৩
এলার্জি ঔষধ এর নাম বাংলাদেশ ২০২৩ | এলার্জির সবচেয়ে ভালো ঔষধ