মাতৃত্বকালীন ভাতা আবেদন করার নিয়ম | অনলাইনে গর্ভবতী কার্ড করার নিয়ম

মাতৃত্বকালীন ভাতা পাওয়া জরুরী কারণ বাংলাদেশে আয়ের উৎস কম। বাংলাদেশে অনেক দরিদ্র পরিবার আছে। তাদের আর্থিক অবস্থা করুণ হওয়াতে ঠিকমতো পরিবার চালানো অনেক কষ্টদায়ক। এক্ষেত্রে একটি মাতৃত্বকালীন ভাতা পাওয়া একটি পরিবারের ভরণপোষণে অনেক সহায়ক। একটি …

মাতৃত্বকালীন ভাতা আবেদন করার নিয়ম

মাতৃত্বকালীন ভাতা পাওয়া জরুরী কারণ বাংলাদেশে আয়ের উৎস কম। বাংলাদেশে অনেক দরিদ্র পরিবার আছে। তাদের আর্থিক অবস্থা করুণ হওয়াতে ঠিকমতো পরিবার চালানো অনেক কষ্টদায়ক। এক্ষেত্রে একটি মাতৃত্বকালীন ভাতা পাওয়া একটি পরিবারের ভরণপোষণে অনেক সহায়ক। একটি সুস্থ সন্তান জন্ম দেওয়ার জন্য গর্ভাবস্থায় পুষ্টিকর খাবার খাওয়া প্রয়োজন এবং সন্তানকে পুষ্টিকর খাবার খাওয়ানো প্রয়োজন। এজন্য বাংলাদেশ সরকার অতি দরিদ্র ও অসহায় ব্যক্তিদের পাশে দাঁড়িয়েছে। যে সকল নারী মাতৃত্বকালীন অর্থাৎ গর্ভাবস্থায় তারা চাইলে ভাতার জন্য আবেদন করতে পারবে। আপনি যদি মাতৃত্বকালীন ভাতার জন্য আবেদন করতে চান‌। এ জন্য আপনাকে কি পদক্ষেপ নিতে হবে অর্থাৎ অনলাইন আবেদন করার নিয়মাবলী এবং কিভাবে আবেদন করবেন। তা এই পোস্ট থেকে জানতে পারবেন। মাতৃত্বকালীন ভাতা অনলাইন আবেদন করার নিয়ম দেখে নিন।

মাতৃত্বকালীন ভাতা কত টাকা

মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয় ২০০৭ ও ২০০৮ এর অর্ধবছর থেকে দরিদ্র মহিলাদের জন্য মাতৃত্বকালীন ভাতা কর্মসূচি শুরু করেছে। কোন দরিদ্র ব্যক্তির পরিবারের যদি কেউ গর্ভধারণ করে তাহলে এই সেবা নিতে পারবে ৪২৬ টি উপজেলায় থেকে। বর্তমানে ৪২৬ টি উপজেলায় এই কর্মসূচি চলমান রয়েছে।

তবে ভাতা আবেদন করার জন্য কিছু শর্ত মানতে হবে। শর্ত জেনে উপজেলার মাধ্যমে মাতৃত্বকালীন ভাতার আবেদন করতে পারবেন। এবং অনলাইনের মাধ্যমে মাতৃত্বকালীন ভাতার আবেদন করতে পারবে। আপনার আবেদনটি যদি সঠিকভাবে সম্পূর্ণ হয় তাহলে অনলাইন ব্যাংকিং এর মাধ্যমে টাকা পাবেন।

মাতৃত্বকালীন ভাতা নীতিমালা

মাতৃত্বকালীন ভাতার অনলাইনে আবেদন করার নিয়মাবলী ও শর্তাবলী জানা প্রয়োজন। ভাতা পাওয়ার জন্য কি কি যোগ্যতা লাগবে পর্যায়ক্রমে জানতে পারবেন। নিম্নে উল্লেখিত যোগ্যতা থাকলে, অবশ্যই মাতৃত্বকালীন ভাতার জন্য আবেদন করবেন।

ভাতা কর্মসূচিতে আবেদনর জন্য শর্তাবলী

  • মাসিক আয় সর্বোচ্চ ৮,০০০ থেকে ১০,০০০ টাকা এবং বাৎসরিক আয় সর্বোচ্চ ১,০০,০০০ টাকা।
  • প্রথম অথবা দ্বিতীয় গর্ভধারণ হতে হবে।
  • অনলাইন ব্যাংকিং এর একাউন্ট থাকতে হবে।
  • অতি দরিদ্র, প্রতিবন্ধী, গরিব ও অসহায় ব্যক্তিদের জন্য এ ভাতা।
  • বাসস্থান বা ভাড়া বাসায় থাকলে আবেদন করতে পারবে। কোন কৃষি জমি বা পুকুর থাকলে হবে না।
  • আইডি কার্ড থাকতে হবে।
  • গর্ভধারণকারীর বয়স হতে হবে ২০ থেকে ৩৫ এর মধ্যে।
  • প্রতি বছর আবেদনকারীর জুলাই মাসে অনুমোদন দেওয়া হয়। এ সময় কমপক্ষে পাঁচ মাসের গর্ভবতী হতে হবে।

মাতৃত্বকালীন ভাতা কত টাকা ২০২৪

মাতৃত্বকালীন ভাতা অনুমোদন পেলে আপনাকে ৩৬ মাসে মোট ২৮,৮০০ টাকা দেওয়া হবে। অর্থাৎ প্রতি মাসে ৮০০ টাকা করে একত্রে প্রতি ৬ মাসে ৪,৮০০ টাকা। তাহলে ৬ মাসে ৪,৮০০ টাকা দেওয়া হবে। ১২ মাসে ৯,৬০০ টাকা। ১৮ মাসে ১৪,৪০০ টাকা। ২৪ মাসে ১৯,২০০ টাকা। এভাবে ৩৬ মাস পর্যন্ত অর্থাৎ ৩ বছরে ৬ ধাপে মাতৃত্বকালীন ভাতা দেওয়া হয়। প্রথম অথবা দ্বিতীয় সন্তানের ক্ষেত্রে একটি ভাতা প্রদান করা হয়।

মাতৃত্বকালীন ভাতা অনলাইন আবেদন ফরম

মাতৃত্বকালীন ভাতা পাওয়া জন্য শর্তগুলো পূরণ করে আবেদন করতে পারলে। আপনি এই ভাতা পেতে পারেন। ভাতা পাওয়ার জন্য গর্ভাবস্থায় মেডিকেল রিপোর্ট, পাসপোর্ট সাইজের ছবি, আইডি কার্ডের ফটোকপি, গর্ভকালীন সনদ সহ টিকা কার্ড সংগ্রহ করে। নির্দিষ্ট ইউনিয়ন পরিষদ বা পৌরসভা বা কাউন্সিলর অফিসে জমা দিতে হবে। সেই সাথে মোবাইল ব্যাংকিং একাউন্ট নাম্বার ও ব্যক্তিগত তথ্য দিয়ে মাতৃত্বকালীন ভাতা ফরম পূরণ করে আসতে হবে। আবেদন করার জন্য তাদের নির্ধারিত ফি দিতে হবে।

মাতৃত্বকালীন ভাতা আবেদন ফরম PDF File Link

অনলাইনে গর্ভবতী কার্ড করার নিয়ম

মাতৃত্বকালীন ভাতার আবেদন করার। পরবর্তীতে উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা অনুমোদন করলে আপনি পেতে পারেন এই ভাতা। যেহেতু এই ভাতা মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের একটি সেবা প্রকল্প। সেই অনুযায়ী তাদের প্রযোজ্য কিছু শর্ত পূরণ করার মাধ্যমে। আপনি পেয়ে যেতে পারেন এই ভাতা। আপনি চাইলে ঘরে বসেই অনলাইনে আবেদন করতে পারেন। অনলাইনে আবেদন করতে কোন প্রকার টাকার প্রয়োজন হয় না। যদি অন্য কারো মাধ্যমে আবেদন করাতে চান তাহলে তাকে কিছু ফি দিতে হবে। কিভাবে ঘরে বসেই অনলাইনের মাধ্যমে আবেদন করবেন দেখে নিন।

মাতৃত্বকালীন ভাতার অনলাইন আবেদন

অনলাইনের মাধ্যমে মাতৃত্বকালীন ভাতার জন্য আবেদন করতে পারবেন। আবেদন করার জন্য তাদের অফিসিয়াল ওয়েব সাইটে প্রবেশ করতে হবে। আপনাদের সুবিধার্থে ওয়েবসাইটের লিংক এখানে দিয়ে দেওয়া হবে। অথবা আপনি চাইলে একটি ব্রাউজার এর সাহায্যে ওয়েব সাইটে যেতে পারবেন। তাদের অফিসিয়াল ওয়েবসাইটের প্রবেশ করার পর একটি ফর্ম আসবে। এখানে ব্যক্তিগত তথ্য, ঠিকানা, অর্থ সামাজিক অবস্থার তথ্য, ছবি ও স্বাক্ষর আপলোড করতে হবে। অনলাইনে আবেদনের ক্ষেত্রে খেয়াল রাখতে হবে প্রতি মাসের ১ থেকে ২০ তারিখের মধ্যে করতে হবে।

প্রথম ধাপ: আবেদনকারীর ব্যক্তিগত তথ্য প্রদান করুন

  • ওয়েবসাইটে প্রবেশ করার পর একটি ফর্ম আসবে। এখানে আবেদনকারীর ব্যক্তিগত তথ্য দিতে হবে।
  • প্রথমে অর্থ বছর এখানে ক্লিক করুন ও বেছে নিন। কোন অর্থবছরে মাতৃত্বকালীন ভাতার আবেদন করছেন।
  • এরপর আবেদনকারীর জাতীয় পরিচয়পত্রের নাম্বার এবং জন্ম তারিখ পূরণ করতে হবে।
  • এরপর আবেদনকারীর নাম বাংলা ও ইংরেজিতে লিখতে হবে। এবং আবেদনকারীর, পিতার নাম, মাতার নাম, এরপর স্বামীর নাম লিখতে হবে।
  • এরপর ফরমের উপরের ছবির মত ব্যাচ নং এ চলমান অর্থ বছর সিলেক্ট করুন। তারপর আবেদনকারীর যে নামে পরিচিত লিখুন। সেই সাথে জন্মস্থান, শিক্ষাগত যোগ্যতা, রক্তের গ্রুপ, ধর্মীয় তথ্য, বৈবাহিক তথ্য, মোবাইল নাম্বার দিয়ে পূরণ করতে হবে।
  • এন আর বি সিলেক্ট করতে হবে‌, যদি আবেদনকারী বাংলাদেশী প্রবাসী হয়ে থাকে। ইতিমধ্যে যদি কোন সরকারি ভাতা পেয়ে থাকেন। তাহলে অন্য কর্মসূচির ভাতাভোগী কি, এই বক্সে ক্লিক করুন।

দ্বিতীয় ধাপ: আবেদনকারীর বর্তমান ও স্থায়ী ঠিকানা প্রদান করুন।

  • এই ফর্মটিতে বর্তমান ও স্থায়ী ঠিকানা পূরণ করতে হবে। বামদিকে বর্তমান ঠিকানা এবং ডান দিকে স্থায়ী ঠিকানা যদি একই হয় তাহলে ক্লিক করুন।
  • আবেদনকারীর বর্তমান ঠিকানা তথ্যগুলো পূরণ করুন। বর্তমান ঠিকানা এবং স্থায়ী ঠিকানা যদি একই হয়। তাহলে চিত্রে বর্ণিত খালি বক্সে ক্লিক করুন। অন্যথায় ধাপে ধাপে সঠিক ঠিকানার তথ্য দিয়ে পূরণ করুন।

তৃতীয় ধাপ: আবেদনকারীর অর্থ ও সামাজিক তথ্য দিয়ে পূরণ করুন।

  • এই ফর্মে অর্থ সামাজিক তথ্য দিন। উল্লেখিত পরিবারের প্রথম রোজগারী মহিলা। বেছে নিন এখানে ক্লিক করে হ্যাঁ অথবা না এর মাধ্যমে নিশ্চিত করুন।
  • এরপর যথাক্রমে মাসিক আয়, প্রতিবন্ধী, বাসস্থান আছে, কৃষি জমি/পুকুর আছে, বয়স গর্ভধারণ ক্রম, অনুসারে দেওয়া থাকবে যথাযথ তথ্য দিয়ে ফর্মটি পূরণ করুন।

চতুর্থ ধাপ: আবেদনকারীর পেমেন্ট এর তথ্য প্রদান করতে হবে।

  • আবেদনকারী কিভাবে ভাতার পেমেন্ট নিবে। অর্থাৎ আবেদনকারী যদি ভাতা পেয়ে যায় সে ভাতার টাকা গ্রহণ করতে। ব্যাংক আথবা মোবাইল ব্যাংকিং এর মাধ্যমে গ্রহণ করবে তা সিলেক্ট করতে হবে। ব্যাংক সিলেক্ট করলে ব্যাংক একাউন্ট নম্বর দিতে হবে অনলাইন ব্যাংকিং সিলেক্ট করলে নাম্বার দিতে হবে।

পঞ্চম ধাপ: আবেদনকারীর ছবি ও স্বাক্ষর প্রদান করতে হবে।

  • আবেদনকারীর ছবি ও তার সাক্ষরের ছবি সাবমিট করতে হবে। ছবি/স্বাক্ষর দুটি খালি বক্স রয়েছে এখানে ছবি ব্লাউজ করুন এবং সাবমিট করুন। সাবমিট করার জন্য ব্রাউজ অপশন এ ক্লিক করে আবেদনকারীর ছবি সিলেক্ট করুন। এরপর স্বাক্ষর এর ছবি ব্রাউস অপশনে ক্লিক করে বসান।

তথ্য প্রদান করার পর ‘সংরক্ষণ করুন’ এখানে ক্লিক করুন। সংরক্ষণ করার মাধ্যমে আবেদনকারীর আবেদন সম্পন্ন হবে।

মাতৃত্বকালীন ভাতা কত টাকা পাওয়া যায়

মাতৃত্বকালীন ভাতা কত টাকা দেয়া হয় তা আমরা উপরে আলোচনা করেছি। সরকারিভাবে মাতৃকালীন বাজেট অনুযায়ী সোনালী ব্যাংকের টাকা দেওয়া হয় এবং অনলাইন ব্যাংকিং এর মাধ্যমে টাকা দেওয়া হয়। আবেদনকারীর আবেদন অনুমোদন পেলে মাতৃত্বকালীন ভাতা প্রাপ্তদেরকে প্রতি মাসে ৮০০ টাকা করে দেয়া হয় তিন বছর পর্যন্ত।

মাতৃত্বকালীন ভাতা পাওয়ার নিয়ম

মাতৃত্বকালীন ভাতার জন্য নিকটস্থ ইউনিয়ন পরিষদ পৌরসভা কাউন্সিলর মাধ্যমে আবেদন করতে পারবে। চাইলে অনলাইনের মাধ্যমেও আবেদন করতে পারবে। বয়সীমা ২০ থেকে ৩৫ বছর হতে হবে। আবেদন করতে হবে প্রতি মাসের ১ থেকে ২০ তারিখের মধ্যে। দরিদ্র ও অসহায়দের জন্য।

মাতৃত্বকালীন ভাতা আবেদন করার নিয়ম

মাতৃত্বকালীন ভাতা কিভাবে পাওয়া যায়

মাতৃত্বকালীন ভাতার অনুমোদন পেলে প্রতি মাসে ৮০০ টাকা করে পাওয়া যাবে। আবেদন করা অবস্থায় যে নামবার প্রদান করা হবে সেই নাম্বারে অনলাইন ব্যাংকিং একাউন্ট থাকতে হবে। আপনি এই টাকা অনলাইন ব্যাংকিং এর মাধ্যমে পেয়ে যাবেন। আবেদন করার জন্য এই পদ্ধতি অবলম্বন করতে পারেন।

এখানে মাতৃত্বকালীন ভাতার আবেদন করার নিয়মাবলী দেখানো হয়েছে। অনলাইনে আবেদন করার পদ্ধতি দেখানো হয়েছে। আশা করা যায় এই পোস্ট আপনাদের উপকারে এসেছে।

Leave a Comment