শবে বরাতের ইতিহাস ও শবে বরাত কেন পালন করা হয়

শবে বরাত, যা মধ্য-শা’বান বা লাইলাতুল বরাত নামেও পরিচিত, হিজরি শাবান মাসের ১৪ ও ১৫ তারিখের মধ্যবর্তী রাতে পালিত একটি গুরুত্বপূর্ণ ইসলামী রাত। উপমহাদেশে এই রাতকে শবে বরাত বলা হয়। শবে বরাত বা লাইলাতুল বরাত …

শবে বরাতের ইতিহাস ও শবে বরাত কেন পালন করা হয়

শবে বরাত, যা মধ্য-শা’বান বা লাইলাতুল বরাত নামেও পরিচিত, হিজরি শাবান মাসের ১৪ ও ১৫ তারিখের মধ্যবর্তী রাতে পালিত একটি গুরুত্বপূর্ণ ইসলামী রাত। উপমহাদেশে এই রাতকে শবে বরাত বলা হয়। শবে বরাত বা লাইলাতুল বরাত হিজরী শাবান মাসের ১৪ ও ১৫ তারিখের মধ্যবর্তী রাত। ইসলামী বিশ্বাস অনুসারে, এই রাতে আল্লাহ তায়ালা তার বান্দাদেরকে বিশেষভাবে ক্ষমা করেন এবং আগামী এক বছরের জন্য মানুষের ভাগ্য লিপিবদ্ধ করেন।

ইতিমধ্যে ইসলামিক ফাউন্ডেশন কর্তৃক ঘোষিত হয়েছে শবে বরাত কত তারিখে পালন করা হবে। আসন্ন ২৫ ফেব্রুয়ারি ও ২৬ ফেব্রুয়ারি রাতে শবে বরাত পালন করা হবে। ঐদিন সকল মুসলমান শবে বরাতের নামাজ পড়ে থাকে। এক বছর পরে এই নফল ইবাদত আসে বলে অনেকেই শবে বরাতের নামাজ কয় রাকাত ও নিয়ত ভুলে যায়। সবার সুবিধার্থে আপনাদের জন্য আমাদের ওয়েবসাইটে শবে বরাত সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য দেওয়া হয়েছে।

শবে বরাত অর্থ কি

শবে বরাত দুটি শব্দের সমন্বয়ে গঠিত।

  • শবে: ফার্সি ভাষার শব্দ, যার অর্থ “রাত”।
  • বরাত: আরবি ভাষার শব্দ, যার অর্থ “মুক্তি”, “পরিত্রাণ”, “ভাগ্য”, “নির্ধারণ”।

অতএব, শবে বরাতের অর্থ হল:

  • মুক্তির রাত: এই রাতে আল্লাহ তায়ালা তার বান্দাদেরকে গুনাহের বোঝা থেকে মুক্তি দান করেন।
  • পরিত্রাণের রাত: এই রাতে আল্লাহ তায়ালা তার বান্দাদেরকে জাহান্নামের আগুন থেকে পরিত্রাণ দান করেন।
  • ভাগ্যের রাত: ধারণা করা হয়, এই রাতে আগামী এক বছরের জন্য মানুষের ভাগ্য নির্ধারণ করা হয়।
  • নির্ধারণের রাত: এই রাতে আল্লাহ তায়ালা পরবর্তী এক বছরের জন্য রিজিক, জীবন-মৃত্যু, সুখ-দুঃখ সবকিছু নির্ধারণ করেন।

উল্লেখ্য যে:

  • “বরাত” শব্দটির ফার্সি অর্থ “সৌভাগ্য”ও হতে পারে।
  • “শবে বরাত” শব্দটির আরবি অনুবাদ হল “লাইলাতুল বারা’আত”।

শবে বরাত কি ভাগ্য রজনী?

শবে বরাতকে ভাগ্য রজনী বলার পক্ষে ও বিপক্ষে দুটি দৃষ্টিভঙ্গি রয়েছে:

ভাগ্য রজনী বলার পক্ষে:

  • কিছু হাদিসে শবে বরাতকে ভাগ্য রজনী বলা হয়েছে।
  • ধারণা করা হয়, এই রাতে আগামী এক বছরের জন্য মানুষের ভাগ্য লিপিবদ্ধ করা হয়।
  • অনেক মুসলমান এই রাতে বিশেষভাবে দোয়া-মোনাজাত করে তাদের ভাগ্যের উন্নতি কামনা করেন।

ভাগ্য রজনী বলার বিপক্ষে:

  • কিছু আলেম মনে করেন, শবে বরাতকে ভাগ্য রজনী বলা হাদিসগুলো দুর্বল।
  • ইসলামে ভাগ্যের ধারণা সম্পর্কে স্পষ্ট নির্দেশনা রয়েছে।
  • ভাগ্যের পরিবর্তন সম্পূর্ণভাবে আল্লাহর হাতে।

পরিশেষে: শবে বরাত ইসলামের একটি গুরুত্বপূর্ণ রাত। তবে এই রাতকে ভাগ্য রজনী বলা সঠিক কিনা তা নিয়ে বিতর্ক রয়েছে।

মুসলমানদের উচিত:

  • এই রাতে ইবাদত-বন্দেগিতে মনোনিবেশ করা।
  • আল্লাহর কাছে ক্ষমা ও মাগফিরাত চাওয়া।
  • ভাগ্যের পরিবর্তনের জন্য আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করা।

মনে রাখা জরুরি:

  • ভাগ্যের পরিবর্তন কেবল দোয়া-মোনাজাতের মাধ্যমে সম্ভব নয়।
  • এর জন্য মানুষের নিজের কর্মের মাধ্যমে পরিবর্তন আনতে হবে।

নামকরণ:

  • মধ্য শাবান: শাবান মাসের মাঝামাঝি এই রাতটি অবস্থিত বলে এ নামকরণ।
  • লাইলাতুল বরাত: ‘বরাত’ শব্দের অর্থ ‘ভাগ্য’। এই রাতে মানুষের ভাগ্য নির্ধারিত হয় বলে এ নামকরণ।
  • শবে বরাত: ‘শব’ শব্দের অর্থ ‘রাত’ এবং ‘বরাত’ শব্দের অর্থ ‘ভাগ্য’।

শবে বরাতের ইতিহাস

  • হাদিসের ভিত্তি: শবে বরাত পালনের কোন স্পষ্ট নির্দেশ হাদিসে পাওয়া যায় না। তবে কিছু হাদিসে এই রাতের গুরুত্ব ও فضائل বর্ণিত হয়েছে।
  • ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট: শবে বরাত পালনের প্রথা ষষ্ঠ হিজরি শতাব্দীতে তৃতীয় খলিফা উসমান ইবন আফফানের আমলে শুরু হয় বলে ধারণা করা হয়।
  • উপমহাদেশে প্রচলন: মুসলিম বিজয়ীদের মাধ্যমে এই রাত পালনের প্রথা ভারতীয় উপমহাদেশে ছড়িয়ে পড়ে।

উপমহাদেশে:

  • ১৫শ শতাব্দীতে সুফি সাধকদের মাধ্যমে শবে বরাত পালনের প্রচলন শুরু হয়।
  • ১৯শ শতাব্দীতে ঢাকার নবাবদের মাধ্যমে এটি ব্যাপক জনপ্রিয়তা লাভ করে।

শবে বরাতের উপলক্ষে মুসলমানরা:

  • রোজা রাখেন
  • নফল নামাজ আদায় করেন
  • কোরআন তিলাওয়াত করেন
  • দোয়া ও মোনাজাত করেন
  • ক্ষমা প্রার্থনা করেন
  • দান-খয়রাত করেন
  • মৃতদের জন্য দোয়া করেন

শবে বরাতের শুভেচ্ছা

শবে বরাতের রাতে কিছু বিশেষ আমল

  • বেশি বেশি নফল ইবাদত পালন করা
  • জিকির করা
  • মোনাজাতে দোয়া করা
  • নিজের জীবনের গুনাহের জন্য আল্লাহর কাছে মাফ চাওয়া
  • বিভিন্ন গরিব ও অসহায় মানুষকে সাহায্য করা
  • সামনের দিনগুলো ভালো মানুষ হিসেবে কাটানোর প্রতিজ্ঞা করা

শবে বরাত একটি গুরুত্বপূর্ণ রাত। এই রাতে আল্লাহর কাছে ক্ষমা ও রহমতের জন্য প্রার্থনা করা উচিত।

শবে বরাত কেন পালন করা হয়

শবে বরাত পালনের বেশ কিছু কারণ রয়েছে।

ধর্মীয় কারণ:

  • ক্ষমা ও রহমতের রাত: মুসলমানদের বিশ্বাস, এই রাতে আল্লাহ তায়ালা তার বান্দাদেরকে বিশেষভাবে ক্ষমা করেন এবং রহমত বর্ষান।
  • ভাগ্য নির্ধারণের রাত: ধারণা করা হয়, এই রাতে আগামী এক বছরের জন্য মানুষের ভাগ্য নির্ধারণ করা হয়।
  • ইবাদতের রাত: মুসলমানরা এই রাতে রোজা রাখা, নফল নামাজ পড়া, কোরআন তিলাওয়াত করা, দোয়া-মোনাজাত করা, এবং দান-খয়রাত করার মাধ্যমে ইবাদত-বন্দেগি করে থাকেন।

সাংস্কৃতিক কারণ:

  • সৌভাগ্যের রাত: ‘বরাত’ শব্দের অর্থ ‘সৌভাগ্য’। অনেকে বিশ্বাস করেন, এই রাতে আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করলে সারাবছর সৌভাগ্য ও সমৃদ্ধি লাভ করা যায়।
  • পূর্বপুরুষদের জন্য প্রার্থনা: এই রাতে অনেকে তাদের মৃত পূর্বপুরুষদের জন্য আল্লাহর কাছে ক্ষমা চান।
  • সামাজিক মেলবন্ধন: এই রাতে মুসলমানরা একে অপরের সাথে দেখা-সাক্ষাৎ করে, খাবার-দাবার বিতরণ করে এবং সামাজিক বন্ধন আরও দৃঢ় করে।

উল্লেখ্য যে, শবে বরাত পালনের ব্যাপারে কিছু হাদিসের বৈধতা নিয়ে বিতর্ক রয়েছে। কিছু অঞ্চলে শবে বরাত পালনের ক্ষেত্রে কিছু রীতিনীতি প্রচলিত আছে যা ইসলামের মূলনীতির সাথে সঙ্গতিপূর্ণ নয়। অতএব, শবে বরাত পালন করা একটি ব্যক্তিগত বিষয়। তবে হাদিসের নির্দেশাবলী অনুসরণ করা এবং অতিরিক্ত রীতিনীতি থেকে বিরত থাকা উচিত।

শবে বরাত নিয়ে আরো যেকোনো তথ্য জানতে আমাদের ওয়েবসাইট ভিজিট করুন। আশা করি আজকের পোষ্টের সাহায্যে জানতে পেরেছেন শবে বরাত সম্পর্কে ইতিহাস ও পালন করার কারণ। শবে বরাতের শুভেচ্ছা বার্তা খুঁজে পেতে আমাদের ওয়েবসাইট ভিজিট করুন।

আরও দেখুনঃ

Leave a Comment