লাইলাতুল কদর ৬ এপ্রিল রোজ শনিবার দিবাগত রাতে পালিত হবে। তাই আপনারা যারা এখনো জানতে পারেননি শবে কদর কবে পালিত হবে। তাদের জন্য বাংলাদেশ ইসলামিক ফাউন্ডেশন চাঁদ দেখা কমিটির সর্বশেষ রিপোর্ট অনুযায়ী দিন উল্লেখ করা হয়েছে। সকল মুসলমানের কাছে হিজরী ক্যালেন্ডারের অন্যতম মাস হচ্ছে রমজান মাস। এই মাসে সকল মুসলমান ফরজ রোজা পালন করে থাকে। এ রমজানের অন্যতম আরেকটি বিষয় হচ্ছে শবে কদরের রাত্রি। এই রাতে ইবাদতের অনেক ফজিলত রয়েছে। যার জন্য সর্বশেষ ১০ রোজার ভেতর রাত্রিগুলোতে শবে কদর তালাশ করতে বলা হয়েছে।
শবে কদর ২০২৪ কত তারিখে
বাংলাদেশে সাধারণত ২৭ রমজানের রাত্রিকে শবে বরাতের রাত্রি হিসেবে বিবেচনা করা হয়। কিন্তু সঠিক নিয়ম হচ্ছে শেষ ১০ রমজানের বিজর রাত্রি গুলোতে ইবাদত করা। কারণ ওই বিজোড় রাত্রি থেকে যেকোনো একটি রাত্রি হবে লাইলাতুল কদরের রাত। তাই আপনারা যারা শুধুমাত্র ২৭ রমজানের রাত্রিতে কদরের রাত বিবেচনা করে ইবাদত করবেন। তাদের জন্য লাইলাতুল কদরের রাত হচ্ছে ৬ এপ্রিল রোজ শনিবার।
শবে কদর ২০২৪
শবে কদর উপলক্ষে বিভিন্ন ফজিলত ও আমল সম্পর্কে বিভিন্ন হাদিস রয়েছে। তাই আপনারা যারা ২০২৪ সালের শবে কদরের রাত্রিতে ইবাদত করবেন। তাদের জন্য এখানে জানানো হয়েছে সাতাশে রমজানের রাত্রি ৬ এপ্রিল রোজ শনিবার দিবাগত রাতে পালন করা হবে। বিভিন্ন হাদিসে শবে কদরের রাত সম্পর্কে বলা হয়েছে। তাই রাতে সকল ধর্মপ্রাণ মুসলমান রাত্রি জাগরণ করে আল্লাহর কাছে বিভিন্ন প্রার্থনা করে থাকে। তাই নিজে জেনে নিন শবে কদর কবে ও অন্যকে জানতে পোস্ট টি শেয়ার করুন।
আজকে কি লাইলাতুল কদর
অনেকেই গুগলে অনুসন্ধান করছেন আজকে কি শবে কদর? আজকে যদি রমজান মাসের শেষ ১০ রোজার বেজোড় রাত্রির একদিন হয়ে থাকে। তাহলে আজকেও হতে পারে লাইলাতুল কদরের রাত। অন্য দিকে ২৭ শে রমজানের রাত্রি বাংলাদেশে পালন করা হবে ৬ এপ্রিল রোজ শনিবার। আপনারা যারা সৌদি আরব সহ মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে রয়েছেন তাদের জন্য লাইলাতুল কদরের রাত হবে ৫ এপ্রিল রোজ শুক্রবার দিবাগত রাত। সবাইকে লাইলাতুল কদরের শুভেচ্ছা–
“আজ রমাদানের শেষ দশকের একটি বিজোড় রাত। হাদীস শরীফের বর্ণনানুযায়ী আজও হতে পারে মহিমান্বিত লাইলাতুল ক্বদর। ক্বদরের ইবাদত হোক সুন্নাহের আলোয় উদ্ভাসিত ও বিদআত থেকে মুক্ত। শুধু ২৭ রমাদানই শবে ক্বদর হিসাবে ইবাদত নয়, বরং রমাদানের শেষ দশকের প্রতিটি রাতেই শবে ক্বদরের জন্য বাড়তি নামাজ, কুরআন তিলাওয়াত ও ইবাদতে সময় দেয়া উচিত।
আয়িশাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ তিনি বলেন,
ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমি যদি কদরের রাত পেয়ে যাই তবে কি দুআ’ পড়বো?
তিনি (রাসূল [সাঃ]) বলেনঃ তুমি বলবে,
اللَّهُمَّ إِنَّكَ عَفُوٌّ تُحِبُّ الْعَفْوَ فَاعْفُ عَنِّي
“হে আল্লাহ! তুমি ক্ষমাকারী, তুমি ক্ষমা করতেই ভালোবাসো। অতএব তুমি আমাকে ক্ষমা করে দাও” সুনানে ইবনে মাজাহ ৩৮৫০
জামে আত-তিরমিযির একটি হাদীস থেকে উক্ত দুআটি একটি বাড়তি শব্দ সহকারে পাওয়া যায়। দুআটি হচ্ছেঃ
اللَّهُمَّ إِنَّكَ عَفُوٌّ كَرِيمٌ تُحِبُّ الْعَفْوَ فَاعْفُ عَنِّي
“হে আল্লাহ! তুমি সম্মানিত ক্ষমাকারী, তুমি মাফ করতেই পছন্দ কর, অতএব তুমি আমাকে মাফ করে দাও” তিরমিযি ৩৫১৩
লাইলাতুল কদর নিয়ে হাদিস
রমাদানে গুনাহ মাফ করানোর গুরুত্বের ব্যাপারে নিচের হাদীসটি আমরা সকলেই জানি। জেনে নিন শবে কদরের নামাজ কত রাকাত, আমল ও নামাজের নিয়ম –
জাবের ইবনে আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
নবী (সাঃ) মিম্বারে উঠলেন। তিনি প্রথম সিঁড়িতে উঠে বলেনঃ আমীন। তিনি দ্বিতীয় সিঁড়িতে উঠেও বলেনঃ আমীন। তিনি তৃতীয় সিঁড়িতে উঠেও বলেনঃ আমীন। সাহাবীগণ বলেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ আমরা আপনাকে তিনবার আমীন বলতে শুনলাম।
তিনি বলেনঃ আমি প্রথম সিঁড়িতে উঠতেই জিবরাঈল (আবু দাউদ) এসে বলেন, দুর্ভাগ্য সেই ব্যক্তির যে রমযান মাস পেলো এবং তা শেষ হয়ে যাওয়া সত্বেও তার গুনাহর ক্ষমা হলো না। আমি বললামঃ আমীন।
অতঃপর দ্বিতীয় ধাপে উঠতেই তিনি বলেন, দুর্ভাগ্য সেই ব্যক্তির যে নিজ পিতা-মাতা উভয়কে অথবা তাদের একজনকে বৃদ্ধাবস্থায় পেলো, অথচ তারা তাকে বেহেশতে প্রবেশ করালো না। আমি বললামঃ আমীন।
অতঃপর তৃতীয় ধাপে উঠতেই তিনি বলেন, দুর্ভাগ্য সেই ব্যক্তির যার নিকট আপনার উল্লেখ হলো, অথচ সে আপনার প্রতি দুরূদ পড়েনি। আমি বললামঃ আমীন।
আদাবুল মুফরাদ ৬৪৮, হাদীসের মানঃ সহীহ
অর্থাৎ আমরা যদি রমাদান পেয়েও আল্লাহর থেকে ক্ষমা লাভ করতে না পরি তাহলে আমাদের দুর্ভাগ্যের জন্য স্বয়ং রাসূল (সা) সমর্থন দিয়ে “আমীন” বলে গেছেন। আমরা কি এর মর্মার্থ অনুধাবন করতে পারি? এলাকার একজন এমপি সাহেব বা সংসদের একজন মন্ত্রী যদি আমাদেরকে দুর্ভাগা বলেন বা আমাদের দুর্ভাগ্যের জন্য সমর্থন দেন আমরা কতই না পেরেশান হয়ে পড়ব! কিন্তু এখানে পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ মানুষটি যেই লোকদেরকে দুর্ভাগা বলেছেন আমরা সেই দলে পড়ে যাচ্ছি না তো? আমরা কি আমাদের গুনাহ মাফ করাতে পেরেছি?
রমাদানের ২০ দিন চলেই গেল। আমরা কেউই জানি না আগামী রমাদান পর্যন্ত আমরা বেঁচে থাকব কিনা। আবার আরেকটি রমাদানে আমাদের গুনাহগুলোকে মাফ করাতে পারব কিনা। তাই এই রমাদানকেই জীবনের শেষ রমাদান হিসাবে চিন্তা করি। গুনাহ মাফ করানোর জন্য রমাদানের শেষ ১০ দিনকে বিশেষ গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করি। যারা প্রথম দিকে তারাবীহ সালাত পড়তে অলসতা করেছি অন্তত এই ১০ দিন পড়ি। এই ১০ দিন আগের চেয়ে একটু বেশি কুরআন তিলাওয়াত ও দান সাদাকা করি। আল্লাহর রাসূল (সা) যেই দুআ শিখিয়ে দিয়েছেন সেই দুআ বারবার পড়ি। দুআর অর্থ বুঝি। অন্তর থেকে উপলব্ধি করে দুআ করি। ইনশাআল্লাহ আল্লাহ আমাদেরকে ক্ষমা করবেনই!
এই পবিত্র সময়গুলো আমরা ফেসবুক বা ইউটিউবে অযথা ঘুরে না বেড়াই। আমাদের প্রোডাক্টিভিটি নষ্ট করার জন্য ফেসবুক-মেসেঞ্জার আর ইউটিউব বর্তমান সময়ের সবচেয়ে বড় মাধ্যম। আমাদের ফোকাস নষ্ট করে সব কাজে ডেস্ট্রাকশন তৈরি করার জন্য এগুলোর জুড়ি নেই। ফেসবুকে আপনি হয়ত আপনার জন্য কাজের বা মূল্যবান ৫% জিনিস পাচ্ছেন। বাকি ৯৫% সময় নষ্ট হওয়া ছাড়া আর কিছু না। নিজেকে ফ্রেন্ডলিস্টের শত শত হাজার হাজার মানুষের কাছে এমন cheap বা সস্তা বানিয়ে না ফেলি যে, কেউ চাইলেই যে কোনো মুহূর্তে আমাকে reach করতে পারে!
চাহিবা মাত্রই যেন আমি আমার কাজ ফেলে ফেসবুকে-মেসেঞ্জারে চলে না যাই। প্রতি দিন কত ঘন্টা মেসেঞ্জার বা ফেসবুকে ব্যয় করছি আর সেগুলো আসলে কতটুকু আমাদের ইহলৌকিক বা পরলৌকিক কাজে আসছে তা চিন্তা করার সময় এসেছে। আমরা একটা কাগজে লিখে রাখতে পারি দৈনিক আনুমানিক ফেসবুক ব্যবহারের সময়। সপ্তাহ শেষে দেখতে পারি পুরো সপ্তাহে কয় ঘন্টা ফেসবুক ইউজ করলাম, কয় ঘন্টা কুরআন পড়লাম আর কয় ঘন্টা ইসলামকে জানার জন্য বই পুস্তক পড়লাম।
তাই আসুন, আমরা রমাদানের এই শেষ ১০টা দিন অন্তত সোশ্যাল মিডিয়ার ব্যবহারকে সীমিত করি। প্রতি বিজোড় রাতে শবে ক্বদরের উদ্দেশ্যে সাধ্যমত তাহাজ্জুদ পড়ি, কুরআন পড়ি, গুনাহ মাফের জন্য আল্লাহর কাছে কান্নাকাটি করি। সাধ্য মত ইতিকাফ করি। শেষ দশকে আমাদের টার্গেট হোক একটাই! আমাদের সকল গুনাহ থেকে মুক্তি!