সরিষার তেল ভোজ্য তেলের মধ্যে অন্যতম একটি। বর্তমানে সয়াবিন তেল অনেকটাই জনপ্রিয়তা পেয়েছে। তবে সরিষার তেলের জনপ্রিয়তা কোন অংশেই কম নেই। রান্নায়, ভর্তা তৈরিতে এবং বিভিন্ন কাজে সরিষার তেল ব্যবহার হয়ে আসছে। সরিষার তেল রান্নায় ব্যবহার করা হয় আমারা সকলেই জানি। তবে এর উপকারিতা সম্পর্কে আমাদের অনেকেরই অজানা। যেহেতু রান্নায় প্রতিনিয়ত ব্যবহার হয়ে আসছে। এই বিষয়ে আমাদের জেনে রাখা প্রয়োজন।
যারা নিয়মিত সরিষার তেল ব্যবহার করে থাকে। অনেকের এর গুনাগুন সম্পর্কে জানা নেই। আমরা চেষ্টা করব সরিষার তেলের গুনাগুন সম্পর্কে তুলে ধরার। আমাদের শরীরের জন্য এই তেল কতটা উপকারী। এর পাশাপাশি উল্লেখ করার চেষ্টা করব সরিষার তেলের উপকারিতা ও অপকারিতা। কারা সরিষার তেল ব্যবহার করতে পারবে এবং কারা থেকে দূরে থাকবে। বিস্তারিত জানতে সম্পূর্ণ পোস্ট পড়ুন। সরিষার তেলের দাম কত এখানে ক্লিক করে দেখে নিন।
রান্নায় সরিষার তেলের উপকারিতা
সরিষা বীজ থেকে দানা বের করে কয়েকটি উপায়ে সরিষার তেল উৎপাদন করা হয়। এটি ভোজ্য তেলের মধ্যে একটি। প্রতিনিয়ত রান্নায় ব্যবহার হয়ে আসছে এবং বিভিন্ন কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে। এই পোস্টে সহজভাবে তুলে ধরার চেষ্টা করব এর উপকারিতা এবং অপকারিতা সম্পর্কে।
সরিষার তেলের উপকারিতা
সরিষা বীজ এ যে পুষ্টি উপাদান রয়েছে, তা তেল উৎপাদনের মাধ্যমে প্রকাশ পায়। শরীরে প্রবেশের মাধ্যমে এর উপকারিতা পাওয়া যায়। তা রান্নার মাধ্যমে হোক অথবা অন্য কোন মাধ্যমে। এই তেলের উপাদান রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে তোলে, শরীর সুস্থ ও সবল রাখে। তাহলে জেনে নেওয়া যাক সরিষার তেল আমাদের শরীরের জন্য কতটা উপকারী।
- রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়– যে সকল উপাদানগুলো রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে তোলে। ওই সকল উপাদান সরিষার তেলে বিদ্যমান রয়েছে। এই তেলে যে পরিমাণ এন্টিওক্সিডেন্ট রয়েছে ক্ষতিকারক মূল্যবান রেডিকালদ্বারা বিমারি প্রতিরোধের ব্যাপারে কার্যকর হয়।
- হৃদপিণ্ড সুস্থ রাখে – মোনোনথী এসিড এই তেলে বিদ্যমান রয়েছে। যা হৃদপিন্ডের ঝুঁকি কমায় এবং হৃদপিন্ডের ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে।
- কোলেস্টেরলের নিয়ন্ত্রণ রাখে – সরিষার তেলে থাকা অ্যালফা লিপোইক এসিড যা কোলেস্টেরলর নিয়ন্ত্রণ রাখতে সাহায্য করে। এর পাশাপাশি হৃদরোগের ঝুঁকি কমাতে পারে।
- ক্যান্সার প্রতিরোধে – কিছু গবেষণায় দেখা গেছে সরিষার তেল ক্যান্সার প্রতিরোধে অনেক সহায়ক। এতে রয়েছে লিনলেনিক অ্যাসিড ওমেগা থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিডে পরিণত হলে। তা স্টমাক আর কোলন ক্যান্সার প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে।
- ওজন কমাতে – ওজন কমানোর জন্য অনেকেই বিভিন্ন ধরনের খাবার এড়িয়ে চলে। এক্ষেত্রে রান্নায় কোন তেল ব্যবহার হয়েছে তা আমরা অনেকেই খেয়াল করিনা। যারা ওজন কমাতে চায় তারা রান্নায় সরিষার তেল ব্যবহার করতে পারে। সরিষার তেলে লোহিত অল্প পরিমাণ থাকায় ওজন কমাতে সাহায্য করে।
- শ্বাসকষের স্বাস্থ্য – শ্বাসকষের ক্ষমতা বাড়ানোর জন্য বেশ উপকারী সরিষার তেল। এতে থাকা থাইমোমলিন এবং কার্সিনোফিল এসিডের উপসর্গ শ্বাসকষের স্বাস্থ্য ভালো রাখে।
সরিষার তেল মালিশের উপকারিতা
- সর্দি কাশি কমাতে – সর্দি কাশি কমাতে এই তেল পূর্বে থেকে ব্যবহার হয়ে আসছে। যাদের দীর্ঘদিনের সর্দি কাশি রয়েছে তাদের জন্য সরিষার তেল অনেক কার্যকারী। সরিষার তেলের সাথে রসুন থেঁতো করে হালকা গরম করুন। এরপর বুকে পিঠে মালিশ করুন। এভাবে রোজ রাতে ব্যবহার করতে পারলে বুকে জমা কফ উঠে আসবে।
- উদ্দীপক হিসেবে কাজ করে – শরীরের রক্ত চলমান রাখার জন্য নিয়মিত সরিষার তেল মালিশ করতে পারলে। রক্ত সঞ্চালন থাকে এবং ঘর্মগ্ৰন্হি উৎপাদিত হয় ও শরীরে তাপমাত্রা কমে। সরিষার তেল পরিপাক হওয়াতে রক্ত সংবহন ও রেচনতন্ত্রের শক্তিশালী উদ্দীপক হিসেবে কাজ করে।
- ব্যথা কমায় – শরীরের দীর্ঘদিনের ব্যাথা অথবা হঠাৎ ব্যথা পেলে সরিষার তেল হালকা গরম করে। ব্যথার উপর মালিশ করতে পারলে দ্রুত উপশম পাওয়া যায়।
- হাড় ক্ষয় রোধ করে – নিয়মিত সরিষার তেল মালিশ করতে পারলে হাড় ক্ষয় রোধ হয়।
ত্বকে সরিষা তেলের উপকারিতা
শীতের মৌসুমে ত্বক ফেটে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। এক্ষেত্রে সরিষার তেল বেশ উপকারী। কেননা এতে রয়েছে এন্টি ব্যাকটেরিয়াল আর এন্টি ফাঙ্গাল উপাদান, এলার্জি রাশ কমাতে সাহায্য করে। ঠোট ফাটা দূর করতে অল্প একটু সরিষার তেল ঠোঁটে নিয়মিত লাগাতে পারলে, ঠোট ফাটা রোধ করা যাবে। চুল সাদা হওয়ার লক্ষণ দেখা দিলে। সরিষার তেল ব্যবহারের মাধ্যমে চুল সাদা হওয়ার রোধ করা যায়। এতে থাকা ভিটামিন ও খনিজ বিশেষ করে উচ্চমাত্রার ক্যাটরিন চুল বৃদ্ধিতে সাহায্য করে। এছাড়াও ত্বকের থালাতে ভাব দূর করতে অনেক কার্যকারী।
সরিষার তেলের ক্ষতিকর দিক
সরিষার তেলের উপকারিতা সম্পর্কে আমরা জেনে নিলাম। এখন জেনে নিব অপকারিতা সম্পর্কে। বিভিন্ন কোম্পানির বোতল সরিষার তেল পাওয়া যায়। এর পাশাপাশি খোলা সরিষার তেল পাওয়া যায়। দাম সাশ্রয় হওয়াতে অনেকেই খোলা সরিষার তেল কিনে থাকে। অনেক অসাধু ব্যবসায়ী রয়েছে যারা বেশি লাভের আশায় ভেজাল তেল গ্রাহকের দিয়ে ঠকিয়ে থাকে। খোলা সরিষার তেল কেনার পূর্বে অবশ্যই খাঁটি সরিষার তেল কিনুন এতে করে স্বাস্থ্য ভালো থাকবে।
সরিষা তেলের উপকারিতা ও অপকারিতা
সরিষা তেল অনেক উপকারী এর পাশাপাশি কিছু অপকারিতা রয়েছে।
- পেটে সমস্যা – সরিষার তেল ব্যবহার করা যাবে তবে অতিরিক্ত ব্যবহার করা যাবে না। এতে করে পেটের নানা ধরনের সমস্যা হতে পারে ডায়রিয়া, পেট ব্যথা এবং গ্যাস হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
- হার্টের ক্ষতি – সরিষার তেলের মধ্যে প্রচুর পরিমাণ এরুকিক আ্যাসিড। যা হার্টের জন্য ভালো নয় এছাড়াও হজম শ্বাসযন্ত্র এবং রক্তের সমস্যা গুলোর মতো গুরুতর সমস্যা তৈরি করতে পারে।
- ত্বকের ক্ষতি – সরিষার তেল ত্বকের জন্য ভালো, তবে অতিরিক্ত ব্যবহার করা যাবে না। সরিষার তেল এপিডার্মিসের ক্ষতি করে ত্বকের জ্বলে অংশের পরিমাণ কমিয়ে দেয়।
- জ্বালাভাব – শুষ্ক ত্বক ভালো রাখতে সাহায্য করে। তবে অতিরিক্ত ব্যবহারের ফলে মুখে জালাবাব হতে পারে।
এখানে সরিষার তেলের উপকারিতা এবং অপকারিতা সম্পর্কে উল্লেখ করা হয়েছে। সরিষার তেল আমাদের জন্য কতটা উপকারী আশা করা যায় জানতে পেরেছেন।
আরও দেখুনঃ