রমজান মাস উপলক্ষে সকল মুসলমান সারাদিন রোজা রাখার পর রাতে তারাবির নামাজ আদায় করে। দীর্ঘ এক বছর পর আবারও আমরা ফিরে পেয়েছি তারাবির নামাজ। রমজানের দিনগুলোতে রাতে এশার নামাজের পর তারাবির নামাজ পড়তে হয়। এক বছর পর পর এই নামাজ আসে, যার জন্য অনেকে তারাবির নামাজ পড়ার নিয়ম ভুলে যায়। আপনাদের জন্য এখানে রমজানের তারাবির নামাজ পড়ার নিয়ম দেওয়া হয়েছে। আরও জানতে পারবেন তারাবির নামাজ পড়ার নিয়ত ও তারাবির নামাজের মোনাজাত।
তারাবির নামাজের নিয়ম ও দোয়া সমূহ
আপনারা যারা রমজান মাসে রোজা রাখবেন ও রাতে তারাবী পড়বেন। তাদের জন্য তারাবির নামাজের নিয়ম ও নামাজ শেষে বিভিন্ন দোয়া সমূহ এখানে দেওয়া হয়েছে। আপনারা খুব সহজে দোয়াগুলো নোট করতে পারবেন ও তারাবির নামাজ ভুলে গিয়ে থাকলে। নিচে উল্লেখিত নিয়ম অনুসরণ করে তারাবির নামাজ সম্পর্কে জানতে পারবেন।
তারাবির নামাজ কত রাকাত
প্রত্যেক বছর তারাবির নামাজ কত রাকাত সে সম্পর্কে বাংলাদেশের বিতর্ক সৃষ্টি হয়। অনেক মসজিদে আট রাকাত তারাবির নামাজ পড়ানো হয় আবার অনেক মসজিদে ২০ রাকাত তারাবির নামাজ পড়ানো হয়। তবে আপনি দুই রাকাত করে আপনার যতটুকু সম্ভব নামাজ আদায় করুন। চার রাকাত পর পর বিশ্রাম নিন ও জিকির করুন।
তারাবির নামাজ সুন্নত নাকি নফল
তারাবির নামাজ সুন্নত-এ-মু’আক্কাদাহ। সুন্নত-এ-মু’আক্কাদাহ হলো এমন একটি নামাজ যা নবী করিম (সাঃ) নিয়মিত আদায় করতেন এবং এর প্রতি গুরুত্ব দিতেন।
তারাবির নামাজের ফজিলত:
- হাদিসে বর্ণিত আছে যে, যে ব্যক্তি ঈমান ও সওয়াবের নিস্যতে তারাবির নামাজ আদায় করবে তার অতীতের গুনাহ মাফ করে দেওয়া হবে। (বুখারী ও মুসলিম)
- রমজান মাসের রাতে তারাবির নামাজ আদায়ের মাধ্যমে আল্লাহর নৈকট্য লাভ করা সম্ভব।
- তারাবির নামাজ মুমিনের ঈমান ও তাকওয়া বৃদ্ধি করে।
তারাবির নামাজের রাকাআত:
- রমজান মাসের প্রতি রাতে কমপক্ষে ৮ রাকাআত তারাবির নামাজ আদায় করা উচিত।
- তবে, রাসুলুল্লাহ (সাঃ) সাধারণত ১১ রাকাআত তারাবির নামাজ আদায় করতেন।
- অনেক মসজিদে ২০ রাকাআত তারাবির নামাজ আদায় করা হয়।
তারাবির নামাজের নিয়ত
এখানে তারাবির নামাজ পড়ার বাংলা ও আরবি নিয়ত দেওয়া হয়েছে।
তারাবির নামাজের নিয়ত আরবিতে: نَوَيْتُ أَنْ أُصَلِّيَ لِلَّهِ تَعَالَى رَكْعَتَيْ صَلَاةِ التَّرَاوِيْحِ سُنَّةً رَسُولِ اللَّهِ تَعَالَى مُتَوَجِّهًا إِلَى جِهَةِ الْكَعْبَةِ الشَّرِيفَةِ اللَّهُ أَكْبَرُ
তারাবির নামাজের বাংলা নিয়ত: আমি কেবলামুখী হয়ে দুই রাকাআত তারাবির সুন্নতে মু’আক্কাদাহ নামাজের নিয়ত করছি। আল্লাহু আকবার।
জামাআতে পড়লে:
- আরবিতে: نَوَيْتُ أَنْ أُصَلِّيَ لِلَّهِ تَعَالَى رَكْعَتَيْ صَلَاةِ التَّرَاوِيْحِ سُنَّةً رَسُولِ اللَّهِ تَعَالَى مُتَوَجِّهًا إِلَى جِهَةِ الْكَعْبَةِ الشَّرِيفَةِ إِمَامًا / مَأْمُومًا بِهَذَا الْإِمَامِ اللَّهُ أَكْبَرُ
- বাংলায়: আমি কেবলামুখী হয়ে দুই রাকাআত তারাবির সুন্নতে মু’আক্কাদাহ নামাজের নিয়ত করছি, এই ইমামের পিছনে ইমাম / মামুম হয়ে। আল্লাহু আকবার।
তারাবির নামাজ পড়ার নিয়ম
তারাবির নামাজের পদ্ধতি:
- দুই রাকাআত করে নামাজ আদায় করতে হবে।
- প্রতি চার রাকাআত পর বিশ্রাম নেওয়া উচিত।
- বিশ্রামের সময় তাসবীহ, তাহলীল, দোয়া-মোনাজাত করা যেতে পারে।
- কোন সূরা পড়তে হবে তার কোন নির্দিষ্ট নিয়ম নেই।
- ইমাম যে সূরা পড়বেন তা মনোযোগ দিয়ে শুনতে হবে।
- তারাবির নামাজের রাকাআত কত হবে তা নির্ভর করে মসজিদের রীতিনীতির উপর।
- সাধারণত ৮, ১০, ১২, ২০ রাকাআত পড়া হয়।
- নামাজ শেষে দোয়া-মোনাজাত করা উচিত।
কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয়:
- তারাবির নামাজ জামাআতে পড়া উত্তম।
- নামাজে তাখির (দেরি) করা উচিত নয়।
- নামাজের সময় মনোযোগ ধরে রাখা জরুরি।
- নামাজের পর দোয়া-মোনাজাতে আল্লাহর কাছে ক্ষমা ও সওয়াবের প্রার্থনা করতে হবে।
তারাবির নামাজের নিয়ম কানুন মহিলাদের
মহিলাদের নামাজের পদ্ধতি:
- পুরুষদের নিয়মের সাথে মহিলাদের তারাবির নামাজের নিয়ম মূলত একই।
- তবে মহিলাদের জন্য ঘরে নামাজ পড়া উত্তম।
- যদি মসজিদে যান, তাহলে পুরুষদের থেকে আলাদা স্থানে নামাজ পড়তে হবে।
- নামাজের সময় পর্দা অবশ্যই পরতে হবে।
- মহিলাদের জোরে জোরে কুরআন তিলাওয়াত করা উচিত নয়।
কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয়:
- মহিলাদের জন্য তারাবির নামাজ ওয়াজিব নয়।
- তবে এটি একটি সুন্নতে মু’আক্কাদাহ।
- তাই নিয়মিত তারাবির নামাজ আদায় করার চেষ্টা করা উচিত।
- নামাজের সময় মনোযোগ ধরে রাখা জরুরি।
- নামাজের পর দোয়া-মোনাজাতে আল্লাহর কাছে ক্ষমা ও সওয়াবের প্রার্থনা করতে হবে।
তারাবির নামাজের মোনাজাত বাংলা অর্থ সহ
বাংলা উচ্চারণ: “সুবহানা জিল মুলকি ওয়াল মালাকুতি, সুবহানা জিল ইয্যাতি ওয়াল আঝমাতি ওয়াল হায়বাতি ওয়াল কুদরাতি ওয়াল কিব্রিয়ায়ি ওয়াল ঝাবারুতি। সুবহানাল মালিকিল হাইয়্যিল্লাজি লা ইয়ানামু ওয়া লা ইয়ামুত আবাদান আবাদ; সুব্বুহুন কুদ্দুসুন রাব্বুনা ওয়া রাব্বুল মালায়িকাতি ওয়ার রূহ।ʼʼ
বাংলা অর্থ : আল্লাহ পবিত্রময় সাম্রাজ্য ও মহত্ত্বের মালিক। তিনি পবিত্রময় সম্মান মহত্ত্ব ও প্রতিপত্তিশালী সত্তা। ক্ষমতাবান, গৌরবময় ও প্রতাপশালী তিনি পবিত্রময় ও রাজাধিরাজ যিনি চিরঞ্জীব, কখনো ঘুমায় না এবং চির মৃত্যুহীন সত্তা। তিনি পবিত্রময় ও বরকতময় আমাদের প্রতিপালক, ফেরেশতাকুল এবং জিবরাইল (আ.) এর প্রতিপালক।
বাংলা উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা ইন্না নাসআলুকাল জান্নাতা ওয়া নাউজুবিকা মিনাননার। ইয়া খালিক্বাল জান্নাতি ওয়ান নার। বিরাহমাতিকা ইয়া আঝিঝু ইয়া গাফফার, ইয়া কারিমু ইয়া সাত্তার, ইয়া রাহিমু ইয়া ঝাব্বার, ইয়া খালিকু ইয়া বার্রু। আল্লাহুম্মা আঝিরনা মিনান নার। ইয়া মুঝিরু, ইয়া মুঝিরু, ইয়া মুঝির। বিরাহমাতিকা ইয়া আরহামার রাহিমিন।’
বাংলা অর্থ: পবিত্রতা ঘোষণা করছি তাঁর, যিনি ইহজগৎ ও ফেরেশতা ও জগতের প্রভু, সেই আল্লাহর মহিমা বর্ণনা করছি যিনি মহিমাময় বিরাট, ভীতিপূর্ণ, শক্তিময়, গৌরবময় এবং বৃহত্তর। আমি সেই প্রতিপালকের গুণগান করছি, যিনি চিরঞ্জীব, যিনি কখনও নিদ্রা যান না এবং যার কখনও মৃত্যু ঘটে না। পুতঃপবিত্র তিনি। তিনি আমাদের পালনকর্তা, ফেরেশতাকুল এবং আত্মাসমূহের পালনকর্তা। আল্লাহ্ ছাড়া কোন ইলাহ নাই, আমরা আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাচ্ছি, আমরা আপনার কাছে বেহেশত চাচ্ছি এবং দোযখ থেকে মুক্তি চাচ্ছি।
আশা করি আজকের পোষ্টের সাহায্যে তারাবির নামাজের নিয়ম ও নিয়ত সম্পর্কে জানতে পেরেছেন। আপনারা যারা এখনো তারাবির নামাজ কয় রাকাত ও তারাবির নামাজের দোয়া সমূহ মুখস্ত করতে পারেননি। তারা চাইলে আজকের পোস্ট থেকে বিস্তারিত সকল তথ্য জানতে পারেন।