টনসিল হলো গলার দুপাশে অবস্থিত দুটি গ্রন্থি। এগুলো শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতে সাহায্য করে। তবে কখনও কখনও এগুলোতে ব্যাক*টেরিয়া বা ভাই*রাসের সংক্রমণ হতে পারে। এতে গলা ব্যথা, জ্বর, মাথাব্যথা, বমি বমি ভাব, শরীর ব্যথা ইত্যাদি উপসর্গ দেখা দিতে পারে। আশা করি আল্লাহর রহমতে ভাল আছেন। আজকে আমাদের টপিক হচ্ছে টনসিল। টনসিল নামটি কম বেশি আমরা সবাই জানি,কিন্তু টনসিলের কারণ কি, এর চিকিৎসা কি, ঘরোয়া পদ্ধতিতে টনসিল নিরাময়ের উপায় কি, আরো বিস্তারিত জানতে পারবো ব্লগটি পড়ে।
টনসিলের সংক্রমণ হলে সাধারণত অ্যান্টিবায়োটিক ওষুধ দেওয়া হয়। অ্যান্টিবায়োটিক ওষুধ ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ ধ্বংস করে। টনসিলের সংক্রমণ যদি ভাই*রাসজনিত হয়। তাহলে অ্যান্টিবায়োটিক ওষুধ কার্যকর হয় না। এক্ষেত্রে ব্যথানাশক ওষুধ এবং জ্বরনাশক ওষুধ দেওয়া হয়।
টনসিল কি
সাধারণত আমাদের গলা ব্যথা হলেই ধরে নেই টনসিল হয়েছে অর্থাৎ টনসিল ইনফেকশন হয়েছে। প্যালাটাইন,লিংগুয়াল,টিউবাল ও অ্যাডেনয়েড এই চারটি গ্রুপ আমাদের মুখের ভিতর অবস্থিত। এই গ্রুপগুলো হলো আমাদের রোগ প্রতিরোধকারী অঙ্গ আর এই অঙ্গগুলোকে বলা হয় টনসিল। প্যালাটাইন টনসিল কি আমরা সাধারণ মানুষ টনসিল বলে জানি।
টনসিল হওয়ার কারণ
টনসিল হলো রোগ প্রতিরোধকারী একটি অঙ্গ। অর্থাৎ আমাদের রোগ প্রতিরোধের ক্ষমতা বা দেহের পুষ্টির অভাব দেখা দিলে টনসিল হয়। এছাড়া আরো অনেক কারণ রয়েছে টনসিল হওয়ার যেমন :অধিকহারে আইসক্রিম খাওয়া, ফ্রিজের ঠান্ডা পানি বেশি পান করা, ব্রাশ না করা, মুখে গহ্বর পুরস্কার না রাখা, দিনের বেশিরভাগ সময় হাত পরিষ্কার না রাখা ইত্যাদি। আর কিছু কারণে টনসিল বেশি দেখা দিতে শীতের মাত্রা বাড়লে, স্যাতস্যাতে জায়গায় বসবাস করলে, অতিরিক্ত ঘাম শরীরে বসে গেলে টনসিলের ইনফেকশন বেশি হতে পারে।
টনসিল এর লক্ষণ
শরীরে জ্বর হতে পারে জ্বরের মাত্রা ১০৩ ডিগ্রি পর্যন্ত হতে পারে। শরীর ব্যথা, গলা ব্যথা, মাথাব্যথা ও কানে ব্যথা হতে পারে। খাবার গিলতে অর্থাৎ ঢোঁক গিলতে ব্যথা অনুভব হবে। বাচ্চাদের ক্ষেত্রে মুখ দিয়ে লালা পরতে দেখা যায়। মুখ থেকে দুর্গন্ধ ছড়াতে পারে।
টনসিলের ঘরোয়া চিকিৎসা
টনসিল হলে সাধারণত জ্বর, গলা ব্যথা, গলা শুকিয়ে যাওয়া, গোলাপ ফুলে যাওয়া ইত্যাদি উপসর্গ দেখা দেয়। টনসিলের জ্বর হলে এমন কোন মেডিসিনের প্রয়োজন হয় না কিন্তু জ্বর যদি মাত্র অতিরিক্ত হয়ে যায় তখন ডাক্তারের শরণাপন্ন হয়ে চিকিৎসা নিতে হবে।
টনসিলের ব্যথার জন্য আমাদের গলার শুকিয়ে আসে এজন্য তরল পদার্থ বেশি বেশি পান করা গলা ভিজিয়ে রাখার জন্য। টনসিলের জন্য আমরা শক্ত খাবার খেতে পারি না, ঢোঁক গিলতে প্রচুর ব্যথার অনুভব হয়। এর জন্য যতটা সম্ভব নরম খাবার বেশি বেশি খাওয়া।লবণ ও গরম পানি দিয়ে গড়গড়া করা। গড়গড়া করার ফলে গলার পিছনের খুসখুসে ভাবটা কেটে যাবে ও ব্যথা কিছুটা উপশম হবে। গলা ব্যথা ও গলার অসারতা ভাব কমানোর জন্য লজেন্স খাওয়া যেতে পারে।
লজেন্স ব্যথা উপশম করতে সাহায্য করে। শুষ্ক ঠান্ডা হাওয়া টনসিলের ব্যথাকে আরও বাড়াতে পারে তাই যতটা সম্ভব ঠান্ডা হাওয়া থেকে দূরে থাকুন। সম্ভব হলে গলায় উষ্ণ কাপড় পেচিয়ে রাখার চেষ্টা করুন। এতে গলা ব্যথা কিছুটা কমতে পারে। টনসিলের আক্রমণে গোলাপ ফুলে যেতে পারে এ সময় উচ্চস্বরে কথা বলা মানে গলার উপর প্রেসার দেওয়া। তাই টনসিল হলে যতটা সম্ভব গলার উপর প্রেসার না দেওয়া অর্থাৎ প্রয়োজন ছাড়া কথা খুবই কম বলা।
টনসিল ফোলা কমানোর উপায়
টনসিল যেহেতু রোগ প্রতিরোধকারী একটি অঙ্গ সেহেতু আমাদের দেহে পুষ্টির যেন কোন ঘাটতি না থাকে। দিনে কয়েকবার হাত ভালোভাবে পরিষ্কার করা। নিয়মিত ব্রাশ করা ও মুখ পরিষ্কার রাখা। টনসিল আক্রান্ত রোগী থেকে দূরে থাকা। আক্রান্ত ব্যক্তির ব্যবহৃত জিনিসপত্র ব্যবহার না করা ইত্যাদি।
টনসিল সম্পর্কে প্রশ্ন ও উত্তর
প্রশ্ন: টনসিলের ঔষধের নাম কী?
উত্তর: টনসিলের ঔষধের মধ্যে রয়েছে অ্যান্টিবায়োটিক, ব্যথানাশক, এবং অ্যান্টিহিস্টামিন।
প্রশ্ন: টনসিলের জন্য কোন অ্যান্টিবায়োটিক ভালো?
উত্তর: টনসিলের জন্য সবচেয়ে ভালো অ্যান্টিবায়োটিক হলো পেনিসিলিন। তবে, পেনিসিলিনের প্রতি সংবেদনশীলতা থাকলে অ্যামোক্সিসিলিন, অ্যাজিথ্রোমাইসিন, বা ক্লারিথ্রোমাইসিন ব্যবহার করা যেতে পারে।
প্রশ্ন: টনসিলের জন্য কোন ব্যথানাশক ভালো?
উত্তর: টনসিলের জন্য সবচেয়ে ভালো ব্যথানাশক হলো প্যারাসিটামল। তবে, যদি ব্যথা বেশি হয় তাহলে আইবুপ্রোফেন বা অ্যাসিটামিনোফেন ব্যবহার করা যেতে পারে।
প্রশ্ন: টনসিলের জন্য কোন অ্যান্টিহিস্টামিন ভালো?
উত্তর: টনসিলের জন্য সবচেয়ে ভালো অ্যান্টিহিস্টামিন হলো ডাইফেনহাইড্রামিন। তবে, যদি ঘুমের সমস্যা হয় তাহলে লোরাটাডিন বা সেটিরিজিন ব্যবহার করা যেতে পারে।
প্রশ্ন: টনসিলের ঔষধ খাওয়ার নিয়ম কী?
উত্তর: টনসিলের ঔষধ খাওয়ার নিয়ম নির্ভর করে ঔষধের ধরন এবং রোগীর বয়স ও ওজনের উপর। সাধারণত, টনসিলের ঔষধ খাওয়ার নিয়ম নিম্নরূপ:
- অ্যান্টিবায়োটিক: সাধারণত ১০-১৪ দিন খাওয়া হয়।
- ব্যথানাশক: প্রয়োজন অনুযায়ী খাওয়া হয়।
- অ্যান্টিহিস্টামিন: প্রয়োজন অনুযায়ী খাওয়া হয়।
প্রশ্ন: টনসিলের ঘরোয়া চিকিৎসা কী?
উত্তর: টনসিলের ঘরোয়া চিকিৎসার মধ্যে রয়েছে:
- প্রচুর পরিমাণে তরল পান করা।
- গরম পানিতে লবণ মিশিয়ে গার্গল করা।
- গরম পানিতে লেবুর রস বা মধু মিশিয়ে পান করা।
- গরম দুধে মধু বা আদা মিশিয়ে পান করা।
- গরম তাপমাত্রায় বিশ্রাম নেওয়া।
প্রশ্ন: টনসিলের ঔষধ খাওয়ার পর কী কী উপসর্গ দেখা দিতে পারে?
উত্তর: টনসিলের ঔষধ খাওয়ার পর কিছু ক্ষেত্রে সামান্য উপসর্গ দেখা দিতে পারে, যেমন:
- বমি বমি ভাব
- বমি
- পেট ব্যথা
- ডায়রিয়া
এই উপসর্গগুলি সাধারণত ক্ষণস্থায়ী এবং নিজে থেকেই সেরে যায়। তবে, যদি উপসর্গগুলি দীর্ঘস্থায়ী হয় বা মারাত্মক হয়, তাহলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
প্রশ্ন: টনসিলের চিকিৎসা না করলে কী হতে পারে?
উত্তর: টনসিলের চিকিৎসা না করলে টনসিলের সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়তে পারে এবং অন্যান্য জটিলতা দেখা দিতে পারে, যেমন:
- ফ্যারিনজাইটিস
- লায়ম ডিজিজ
- স্পাইরোচেটোসিস
- ইনফ্লুয়েঞ্জা
তাই টনসিলের উপসর্গ দেখা দিলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
প্রশ্ন: টনসিলের টিকা আছে কি?
উত্তর: হ্যাঁ, টনসিলের টিকা আছে। এই টিকা টনসিলের সংক্রমণ থেকে রক্ষা করতে সাহায্য করে। তবে, এই টিকা সব বয়সের মানুষের জন্য উপযুক্ত নয়।
উপরোক্ত আলোচনা থেকে জানতে পেরেছি টনসিল কি, টনসিল এর লক্ষণগুলো,টনসিল হলে আমাদের কি কি করণীয়, টনসিল রোধে আমাদের কি কি করণীয় আরো অনেক কিছু। আশা করি ব্লকটি পরে আপনারা টনসিল সম্পর্কে পরিপূর্ণ ধারণা পেয়েছেন। ব্লগ টি ভালো লাগলে কমেন্ট করুন এবং টনসিল সম্পর্কে কোন তথ্য জানার থাকলে কমেন্ট করুন, ধন্যবাদ।
আরও দেখুনঃ
চুলকানি দূর করার ক্রিম ও ঔষধ এর নাম ২০২৩
Fexo 120 এর কাজ কি? খাওয়ার নিয়ম, পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া ও সর্তকতা
এলার্জি ঔষধ এর নাম বাংলাদেশ ২০২৩ | এলার্জির সবচেয়ে ভালো ঔষধ
১ বছরের বাচ্চার টনসিল হইলে করোও নিও কি???
ভালো শিশু বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শ নিন