ঠান্ডা থেকে বুকে কফ জমে শ্বাসকষ্টের সৃষ্টি হয়। বছরের নির্দিষ্ট কিছু সময় বেশিরভাগ মানুষের ঠান্ডা জনিত সমস্যা বেশি দেখা দেয়। অন্যদিকে অনেকের ঠান্ডার সাথে বুকে কফ সৃষ্টি হয়। আপনার যদি কাশির সাথে কফ বের হয় তাহলে আপনার জন্য অনেকটা সন্তুষ্টি জনক। কিন্তু অনেকেই আছে শুধু কাশি হয় কিন্তু ভিতরের কফ বের হয় না। তাদের জন্য বর্তমানে বিভিন্ন ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানির ওষুধ রয়েছে যা সেবন করার মাধ্যমে আপনি নিজের বুকের কফ বের করতে পারবেন।
বিভিন্ন ডাক্তার বুকের কফ দূর করার জন্য অ্যালকফ কফজেল ট্যাবলেট খাওয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকে। কারণ বিভিন্ন ঋতু পরিবর্তনের সময় আমাদের শরীর আবহাওয়ার তাপমাত্রা নিতে না পেরে ঠান্ডা বা সর্দি কাশি ও জ্বর বহন করে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে জ্বর দ্রুত চলে গেলেও ঠান্ডা থেকে যায়। যে ঠান্ডা থেকে পরবর্তীতে বুকে কফ জমে। তাই আপনার বুকের কফ বের করার ওষুধের নাম জেনে নিন আজকের এই পোস্ট থেকে।
বুকের কফ কেন হয়?
ঋতু পরিবর্তনের ফলে আমাদের শরীরে জ্বর ঠান্ডা বা সর্দি কাশির দেখা দেয়। পরবর্তীতে আমাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা ঠান্ডার সাথে হার মানে। যার ফলে আমাদের অনেকের ঠান্ডার ফলে বুকে কফ জমে। আবার অন্যদিকে অনেকের আছে যাদের কফ অনায়াসে বের হয়ে কিছুদিন পর চলে যায়।
বুকে কফ জমে থাকার লক্ষণ
আপনার যদি দীর্ঘদিন যাবত শুষ্ক কাশি থাকে ও আপনার শ্বাসকষ্ট হয়। তাহলে বুঝতে হবে আপনার বুকে কফ জমে আছে। বিভিন্ন কারণে বুকে কফ জমতে পারে তার মধ্য থেকে ছয়টি কারণ এখানে উল্লেখ করা হয়েছে।
- এসিড রিফ্লাক্স: এটি থাকলে পাকস্থলীর এসিড খাদ্যনালী থেকে গলাতে চলে আসবে। যার ফলে আপনার বুকে কফ জমতে পারে।
- এলার্জি: আমাদের বেশিরভাগ মানুষের এলার্জি কত সমস্যা রয়েছে। এলার্জি ও অতিরিক্ত শ্লেষ্মা তৈরি করে বুকে কফ জমতে সাহায্য করে।
- হাঁপানি: আপনার যদি হাঁপানি কত সমস্যা থাকে তাহলে আপনার বুকে কফ জমতে পারে। কারণ শ্বাসনালীতে প্রদাহ হয় বলে অতিরিক্ত শ্লেষ্মা তৈরি হয়।
- ব্যাকটেরিয়া ও ভাই*রাস সংক্রমণ: আপনার শ্বাসনালীতে বা ফুসফুসে ব্যাকটেরিয়া ও ভাই*রাস এর সংক্রমণ হলে সেখান থেকে অতিরিক্ত শ্লেষ্মা নিঃসরিত হয়ে বুকে কফ জমা হয়।
- অন্যদিকে সিওপিডি: যার পূর্ণরূপ হচ্ছে ক্রনিক অবস্ট্রাক্টিভ পালমোনারি ডিজিজ ও সিস্টিক ফাইব্রোসিস রোগের কারণে বুকে কফ জমা হয়ে থাকে।
বুকের কফ বের করার ওষুধ এর নাম
একটি যন্ত্রণাদায়ক অসুখ হচ্ছে বুকের কফ থেকে যাওয়া। কারণ এটি আপনাকে ঠিকমত ঘুমাতে দিবে না ও শ্বাসকষ্টের সৃষ্টি করবে। তাই আপনার উচিত একজন ভালো ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী কফ নিরাময় করার ওষুধ সেবন করা। আজকের পোস্টে আপনাদের জানাবো আপনারা কিভাবে খুব সহজেই বুকের কফ বের করতে পারবেন একটি ওষুধ খাওয়ার মাধ্যমে। অ্যালকফ কফজেল ট্যাবলেট (Alkof Cofgel Tablet) কাশি নিবারণ করার জন্য ব্যবহার করা হয়। তবে এই ওষুধটির কিছু রয়েছে পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া। যাদের ব্রংকাইটিস থাকে তারা এই ট্যাবলেট খাওয়ার আগে ডাক্তারের কাছে পরামর্শ করে নিবেন। নিচে আলোচনা করা হয়েছে কিভাবে এই ওষুধটি খাবেন ও পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া। অন্যদিকে আরো আলোচনা করা হয়েছে বুকের কফ বের করার ঘরোয়া উপায় ।
গলার কফ দূর করার ওষুধ
বুকের কফ বের করার মেশিন এর নাম হচ্ছে sucker machine। এই মেশিনটির মডেল হচ্ছে ২৩ ও মূল্য ৬৩০০ টাকা। অন্যদিকে যারা মেশিন ছাড়া ওষুধ সেবনের মাধ্যমে গলার কফ বের করতে চান। তারা ডাক্তারের সরপন্ন হয়ে অ্যান্টিবায়োটিক ওষুধ খাওয়ার মাধ্যমে সুস্থ হতে পারেন। বাজারে জনপ্রিয় কিছু গলার কফ দূর করার ট্যাবলেট রয়েছে। যার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে অ্যালকফ কফজেল ট্যাবলেট ও মিউকোলিড ট্যবলেট ট্যাবলেট। Alkof Cofgel Tablet কফ নিরাময়ের পাশাপাশি শ্বাসকষ্ট রোধ করতে সাহায্য করে। অন্যদিকে Mucolyt Tablet গলার কফ দূর করতে সাহায্য করে।
বুকের কফ বের করার ঘরোয়া উপায়
আমরা অনেকেই আছি যারা ঘরোয়া উপায়ে বুকের কফ বের করতে চাই। তাদের জন্য বুকের কফ বের করার উপায় এখানে বর্ণনা করা হয়েছে। গলার কফ বের করার উপায় গুলো নিচে বর্ণনা করা হয়েছে মনোযোগ সহকারে পড়ুন ও নিয়ম গুলো মেনে চলুন।
মধু ও তুলসী পাতা: ঘরোয়া উপায়ে গলা ও বুকের কফ দূর করতে চাইলে আপনাকে অবশ্যই মধু এবং তুলসী পাতা একসাথে সেবন করতে হবে। তুলসী পাতার রসের সাথে কয়েক মিলি মধু হালকা গরম করে সকালে ও রাতে সেবন করবেন। আশা করা যায় আপনি দ্রুত ফলাফল পাবেন।
মধু ও আদা: মধু ও আদা অত্যন্ত উপকারী জিনিস। আপনার বুকের কফ দূর করতে এটি সাহায্য করবে। হাফ গ্লাস হালকা গরম পানিতে দুই চামচ মধু ও দুই চামচ আদার রস মিশিয়ে প্রত্যেকদিন দুই থেকে তিনবার সেবন করলে খুব দ্রুত ফলাফল পাবেন।
আরও জানুনঃ কাশির ঔষধ ও সিরাপ এর নাম | কাশির এন্টিবায়োটিক ট্যাবলেট এর নাম
আদা চা: চা পাতার সাথে ভালো করে আদা মিশিয়ে খাবেন এটা আপনার বুকের ও গলার কফ দূর করতে সাহায্য করবে। ছোট ছোট টুকরো করে আদা কেটে লবণ দিয়ে দিনে তিন থেকে চারবার খাবেন। এটি আপনার গলার ও বুকের জমে থাকা কফ অতি দ্রুত নিরাময় করে দিবে।
শিশুর বুকের কফ বের করার ওষুধ নাম
আমাদের চারপাশে ছোট ছোট শিশুদের ঠান্ডা সমস্যায় বুকে কফ জমতে দেখা যায়। শিশুদের বুকের কফ দূর করার জন্য হাই অ্যান্টিবায়োটিক ওষুধ না খাওয়ানো ভালো। সেক্ষেত্রে আপনারা কিছু ঘরোয়া উপায় এপ্লাই করে দেখতে পারেন। নিচে উল্লেখ করা হয়েছে শিশুদের বুকের কফ দূর করার ঘরোয়া উপায়। অ্যালকফ কফজেল ট্যাবলেট বা ঔষধ ৪ বছরের কম বয়সী শিশুদের জন্য ব্যাবহার করা যাবে না।
- হালকা গরম পানির সঙ্গে এক চামচ মধু ও লেবুর রস মিশিয়ে খাওয়ান এটি আপনার শিশুকে বুকের কফ জমা থেকে স্বস্তি দেবে।
- আপনার বাচ্চার সর্দি বা জ্বর হলে ঘুমানোর সময় মাথা কিছুটা উঁচু করে রাখুন যাতে করে শ্বাস- প্রশ্বাস নেয়া অনেকটা সহজ হয়।
- ঠান্ডা সমস্যা হলে টমেটো ও রসুনের সুপ খাওয়াতে পারেন। এটি আপনার শিশুর শরীরের পানির চাহিদা পূরণের সঙ্গে সঙ্গে কফ গলিয়ে স্বস্তি দেবে।
- একটি পাত্রে গরম পানি নিয়ে সেটি দিয়ে শিশুকে ভাপ দিন। এভাবে কয়েকবার ভাব নিলে আপনার শিশুর নাকের ছিদ্র পরিষ্কার হয়ে যাবে।
- আপনার শিশুর সর্দি বা কাশি হলে অবশ্যই কুসুম পানি দিয়ে গোসল করাবেন এতে করে সর্দি শরীরে বসে যেতে পারে না।
বাজারে বিভিন্ন সিরাপ ও ওষুধের চাইতে। মধু তুলসী পাতার রস ও লেবু মেশানো হালকা কুসুম পানি বেশি উপকারী। আপনি এই নিয়মগুলো অনুসরণ করে দেখতে পারেন আশা করি ভালো ফলাফল পাবেন।
বুকের কফ দূর করার ওষুধের পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া
এই ওষুধটি সেবন করার ফলে কয়েকটি ভিন্ন ধরনের পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হতে পারে তার মধ্যে অন্তত হচ্ছে ও উদ্বেগ, পেট খারাপ, অস্থির অনুভূতি, স্নায়বিকতা, বিভ্রান্তি, হ্যালোসিনেশন, ধীর ও অগভীর শ্বাস। Alkof Cofgel Tablet শুকনো কাশি হলে খাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়। এলক অফ কনসিল ট্যাবলেট এর ক্ষতিকর প্রভাব গুলো নিচে দেওয়া হল :
- অনুত্তেজিত
- ঘুম-ঘুম ভাব
- ক্লান্তি
- বমি
- দুর্বলতা
- জলবিয়োজন হওয়া
- মাথা ঘোরা
- হালকা মাথাব্যথা
- মাথা ব্যাথা
- ঘাম
- অ্যানিমিয়া বা র*ক্তাল্পতা
- বমি বমি ভাব
- এডিমা (ফোলা)
- কোষ্ঠকাঠিন্য
- মুখ শুকনো হওয়া
বুকের কফ দূর করার সিরাপ এর নাম
গলায় ও বুকে কফ জমে থাকার ফলে অসংখ্য মানুষের অস্বস্তি অনুভূতি হয়। যার জন্য বাজারে বিভিন্ন ঔষধ কোম্পানি কফ দূর করার সিরাপ প্রকাশ করেছে। তাই এখানে আপনাদের জন্য গলার কফ ও বুকের কফ দূর করার সিরাপের নাম উল্লেখ করা হয়েছে।
গলার কফ দূর করার সিরাপের নাম
তুসকা প্লাস: এই সিরাপ সকলের কাছে গলার কফ পরিষ্কার করার জন্য পরিচিত। সিরাপটি দিনে দুই চামচ করে তিনবার খাবার পরামর্শ দেওয়া হয়। বিভিন্ন ফার্মেসিতে ১০০ মিলি তুসকা প্লাস সিরাপ এর দাম ৮০ টাকা।
Adovas (অ্যাডোভাস): এই সিরাপটি শুষ্ক কাশি ও গলার খুসখুস ভাব অতি দ্রুত নিরাময় করে। দুই চামচ করে দিনে তিনবার খাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়। বিভিন্ন ফার্মেসিতে ১০০ মিলি অ্যাডোভাস সিরাপ এর দাম ৬৫ টাকা।
আরও পড়ুনঃ টনসিল এর ঔষধ | গলা ব্যাথার ঔষধের নাম ও ঘরোয়া চিকিৎসা
এমব্রক্স: এই সিরাপটিও গলা ও বুকের জমাট বেঁধে যাওয়া কফ দূর করে থাকে। দুই চামচ করে প্রত্যেক দিন তিন বেলা খাবার নিয়ম দেওয়া হয়। ফার্মেসিতে ১০০ মিলি Ambrox সিরাপের দাম ৫০ টাকা।
অকফ: গলার জমাট বাধা কফ দূর করার জন্য এই সিরাপ ডাক্তাররা খেতে বলেন। অন্যদিকে আপনার নাক দিয়ে পানি পড়া ও সর্দিতে নাক বন্ধ হয়ে গেলে তা দূর করার জন্য ব্যবহার করা হয় এই সিরাপ। প্রত্যেক বেলায় দুই চামচ করে খাওয়ার নির্দেশ রয়েছে ও ১০০ মিলি ও অকফ সিরাপ এর দাম ১০০ টাকা।
বুকের কফ বের করার সিরাপ
যাদের গলায় কফ জমাট না বেঁধে বুকে জমে আছে তাদের জন্য এই সিরাপ গুলো গুরুত্বপূর্ণ।
মুকোসপেল (Mucospel): এটি আপনার বুকের জমাট বাঁধা কফ নিরাময় করতে সাহায্য করবে। দিনে তিন থেকে চারবার সেবন করার নিয়ম রয়েছে। ১০০ মিলি মুকোসপেল সিরাপের মূল্য ৪০ টাকা।
এমব্রক্স (Ambrox): এই সিরাপটিও বুকের জমে থাকা কফ দূর করার জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ। এটি আপনার ফুসফুস পরিষ্কার করে। দিনে দুই থেকে তিনবার খাওয়ার নিয়ম রয়েছে। ১০০ মিলি এমব্রক্স ( Ambrox ) সিরাপ ক্রয় করতে আপনাকে দিতে হবে ৫০ টাকা।
রিকফ: আমাদের যাদের বুকে কফ জমাট বেঁধে রয়েছে তার দূর করার জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ। এই সিরাপটি বন্ধ হওয়া নাক সচল করে ও পানি পড়া রোধ করে। দিনে দুই থেকে তিনবার এই সিরাপটি খাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়। ১০০ মিলি রিকফ সিরাপের মূল্য ১০০ টাকা।
আজকের পোস্টে আপনাদের জন্য উল্লেখ করা হয়েছে বুকের কফ বের করার ওষুধ নাম ও সিরাপ এর নাম। ঠান্ডা জনিত যে কোন সমস্যার জন্য এমবিবিএস ভাল ডাক্তারের পরামর্শ নিন ও সেই অনুযায়ী ওষুধ সেবন করুন। নিজের ইচ্ছেমতো ওষুধ সেবন করা থেকে বিরত থাকুন।
আরও দেখুনঃ
ঠান্ডা কাশির ঔষধের নাম | শিখে নিন ঠান্ডা কাশি দূর করার ঘরোয়া উপায়